আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান’ ভাঙ্গুড়ায় এক বাবার আকুতি

সিরাজুল ইসলাম আপন, ক্রাইম রিপোর্টার (পাবনা): একটা নিউজ করেন ভাই। আপনারা আমার ছেলেকে কে বাঁচান। সাংবাদিককে সামনে পেয়ে কান্নাজড়িত এই আকুতি জানালেন এক হতদরিদ্র বাবা। পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের ঝবঝবিয়া গ্রামের মো: মকুল হোসেনের কণ্ঠে ঝরল এই আকুতি।

প্রতিবেশী শিশুরা যখন হই-হুল্লোড়ে মেতে থাকে তখন দুই বছর বয়সী নাবিউল হাসানের কান্নাকাটিতে বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মুখ থেকে হারিয়ে গেছে মা-বাবা ডাক। কয়েক দিন আগেও সমবয়সীদের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকলেও কিডনিতে টিউমার রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মুখ থেকে হারিয়ে গেছে হাসি। আরামদায়ক ঘুম এ বয়সেই কপাল থেকে উধাও হয়ে গেছে তার। অসহনীয় যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করেই শিশুটির কাটে প্রতিটি রাত। বাবাও নির্ঘুম রাত কাটান ছেলের যন্ত্রণা দেখে কাঁদতে কাঁদতে। টাকার অভাবে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারবে না বলে নাবিউলকে রেখেই বাবার বাড়িতে চলে গেছেন মকুলের স্ত্রী নুপুর খাতুন। এখন অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাবা মকুল হোসেন। একমাত্র ছেলের কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই ভাড়ায় চালিত অটোভ্যানচালক বাবা মকুলের।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোমলমতি নাবিউলের বাম কিডনীতে টিউমার হয়েছে। দ্রুত ঢাকা নিয়ে অপারেশন ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তা সারিয়ে ফেলা সম্ভব। এ চিকিৎসায় ব্যয় করতে হবে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ্য টাকা। নতুবা শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। চিকিৎসকদের মুখে এমন কথা শুনে মাথায় বাজ পড়েছে ভাড়ায় চালিত অটোভ্যানচালক মকুলের। কখনো অটোভ্যান কখনো বা স্টিয়ারিং গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালিয়ে ঠিক মতো দু-বেলা খাবার খরচ জোগানো দায়, সেখানে ছেলের চিকিৎসায় এত অর্থ কোথায় পাবেন! ডুকরে ডুকরে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার নেই অসহায় বাবার। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগাড়ে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। কিন্তু আশানুরূপ সহযোগিতা মিলছে না।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে একই উপজেলার চর-ভাঙ্গুড়া গ্রামের হজরত প্রামানিকের মেয়ে নুপুরের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় মকুলের। বিয়ের দুই বছর পর মকুল-নুপুর দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় নাবিউল। দেড় বছর বয়স পার হতেই হঠাৎ করে অসুস্থ হয় শিশুটি। নাবিউলকে পাবনায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতীশ কুমার কুন্ডর কাছে নিয়ে যান বাবা-মা। সেখানে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার পর চিকিৎসক জানান নাবিউলের বাম কিডনীতে টিউমার হয়েছে। অপারেশন ও উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন।

অপারেশন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে ছেলেকে অপারেশন ও উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো এতটুকুন সামর্থ্য নেই মকুলের। এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে ছোট্ট নাবিউল। যতোই দিন গড়াচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা বয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে নাবিউলের জীবন। আর ছেলের চিকিৎসা খরচের সহযোগিতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় বাবা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে নাবিউলের বাবা মকুল হোসেন বলেন, অভাবের সংসারে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারবো না জেনে তার স্ত্রী ছেলেকে রেখেই বাবার বাড়িতে চলে গেছে বলছে আর সংসার করবে না। গরীব মানুষের ঘরে আল্লাহ এমন রোগ দেন কেন? আল্লাহ তো সব দেখেন, সব জানেন। আমি নিরুপায়। ছেলের কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। টাকার অভাবে কী আমার ছেলে মারা যাবে? প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা কামনা করেন। এ সময় এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘একটা নিউজ করেন ভাই। আমার ছেলেকে বাঁচান।’

নাবিউলের চিকিৎসা ব্যাপারে জানতে চাইলে বা সহযোগিতার জন্য বাবা মকুল হেসেনের এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে – ০১৭৩৬-৬৩০৬১০।

Leave a Reply

Your email address will not be published.