কালাইয়ে গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে নামমাত্র জামানতে সহজ শতের্ ঋণ দেয়ার নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে সওজ নামের এক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। দেখা গেছে অফিস বন্ধ করে পরিচালক ও কর্মকর্তারা রাতের আঁধারে আসবাবপত্র নিয়ে পালিয়েছেন প্রতারকরা। কয়েক দিন ধরে অফিস বন্ধ দেখে গ্রাহকরা সওজ এনজিওর সামনে এসে নিরুপায় হয়ে ফেরত যাচ্ছেন। প্রতারণার শিকার আফছার আলী নামে এক গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের প্রথম দিকে কালাই উপজেলা সমবায় অফিস থেকে গবাদিপশু পালনের ওপর সি-১৪০৭৩১ নম্বর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কালাই থানার পশ্চিম পাশে এবং উপজেলার মাত্রাই বাজারে সওজ নামে একটি এনজিওর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে কালাই উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে আশপাশের উপজেলাতেও এর বিস্তার পায়। প্রতিটি গ্রামে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের ২-৩টি করে সমিতি গঠন করেন প্রতারকরা। প্রত্যকের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ ১০০ টাকা এবং সাপ্তাহিক সঞ্চয় ৫০ টাকা করে জমা নেওয়া হয়। গ্রাহকদের জমানো অর্থের বিনিময়ে গরু, ছাগল দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে দেওয়াও হয়েছে। এতে ৯ মাসে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে উপজেলার আশপাশসহ প্রায় পাঁচ হাজার। এসবে আকৃষ্ট হয়ে আমানতকারীরা সেখানে সঞ্চয় জমা করেন। প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের জমানো প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তারা উধাও। শুধু তাই নয়, সওজে যারা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তাদের কাছ থেকে জামানত বাবদ ১০ হাজার করে প্রায় তিন লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৯ মাস আগে উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের আরবাব গ্রামে ১২ সদস্যের একটি সমিতি গঠন করেন সওজ এনজিওর কর্মীরা।

এ পর্যন্ত ১২ জনের ভর্তি ফিসহ সঞ্চয় জমা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ টাকা। গত দুই সপ্তাহ আগে তাদের সমিতির দুজন সদস্যকে ছাগল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এসে অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলতে দেখে হইচই শুরু করেন। এরপর আরবাব গ্রামের সমিতির পক্ষে গ্রাহক আফছার আলী বাদী হয়ে থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। উপজেলার আহমেদাবাদ ধাপকি গ্রামের সদস্য আয়না, মহুয়া, জাহানারা, সুমাইয়াসহ অনেকে জানান, তাদের সমিতিতে ৫০ হাজারের বেশি সঞ্চয় জমা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ কিছু পাইনি। এখন দেখছি এনজিওই বন্ধ। এনজিওকর্মী সুমাইয়া আকতার জানান, সওজ এনজিওর পরিচালক জয়নুল হোসেন তাকে তার এনজিওতে কাজ করতে বলছিল। জামানত হিসাবে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে চার মাস ধরে কাজ করছি। আজও বেতন পাইনি। এখন অনেক গ্রাহক তাদের বাড়িতে আসছে পাওনা টাকার জন্য। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্য তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সঞ্চয় বা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নয়। তাদের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোঁজ নিতে বলেছেন, তদন্ত চলমান।

কালাই থানার ওসি ওয়াসিম আল বারি জানান, পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.