কালাইয়ে প্রশাসনের ইশারায় পুকুর দখল নিতে বিষ প্রয়োগ দায়িত্বে থাকা ২ জন গ্রেফতার

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে বিয়ালা এলাকায় মৎস্যজীবীদের লীজ নেওয়া ম্যার পুকুর দখল নিতে কৌশলে বিষ দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। নিজেরা বিষ দিয়ে উল্টো মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছে থানায়। এ ঘটনায় পুলিশ পুকুর দেখভালের দায়িত্বে থাকা মৎস্যজীবীদের দুইজনকে গ্রেফতারও করেছে। আবার বিষ দেওয়া পুকুরের প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে গেছে ওই নেতা।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এমন ঘটনা ওই পুকুর পাড়ে ঘটেছে। পুলিশ মৎসজীবীদের দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মৎসজীবীদের পুকুর দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী ও আব্দুল আলিম।

উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, মৎস্যজীবী সমিতি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ালা মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ম্যারের পুকুরটির আয়তন ৩.৮৯ একর। উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুরটি মৎসজীবী সমবায় সমিতির নিকট লিজ দিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪২৯-১৪৩১ বাংলা সনের তিন বৎসরের জন্য ভ্যাটসহ ১ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টাকায় সর্বোচ্চ ডাকের মাধ্যমে উপজেলার ধুনট মৎসজীবী সমবায় সমিতি ওই পুকুরটি পায়। সে অনুযায়ী তারা টাকা জমা দিয়ে গত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর সহকারি কমিশনার (ভূমি) কালাইয়ের নিকট থেকে ওই পুকুরটির ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) নেন। এরপর সমিতির পক্ষ থেকে বিয়ালা গ্রামের জাইবর আলীর ছেলে বুলবুল আহম্মেদকে ওই পুকুরটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ধুনট মৎসজীবী সমবায় সমিতি যেদিন ওই পুকুরের ডিসিআর হাতে পায়, সেদিন থেকে ওই পুকুরটি মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের নজরে আসে। তখন থেকেই তিনি স্থানীয় মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনম শওকত হাবীব তালুকদার লজিকের মদদে ওই পুকুরটি নিজের দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তিনি চলতি মাসের গত শুক্রবার সকালে শহিদুল চেয়ারম্যানসহ তার লোকজনদের নিয়ে ওই পুকুরের মাছ ধরতে যান। সেদিন দুই পক্ষই পুকুর পাড়ে শক্ত অবস্থান নিলে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে তাদের সমঝতার কথা বলে ফেরত পাঠান। এরপর শহিদুল সমঝতোয় না বসে বরং বুধবার সকালে চেয়ারম্যানের পরামর্শে ওই পুকুরে প্রথমে বিষ প্রয়োগ করে এবং থানায় গিয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা বুলবুল আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করেন। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের লোকজন নিয়ে গিয়ে ওই পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যায় শহিদুল। এদিকে অভিযোগ পেয়ে কালাই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে বিয়ালা গ্রাম থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, পুকুরটি যেদিন থেকে ওই সমিতির লোকজন পেয়েছে, সেদিন থেকেই শহিদুল ওই পুকুর নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। এর আগেও পুকুরটি দখল করার জন্য শহিদুল লোকজন নিয়ে পুকুরে আসছিল। সেদিন সমিতির লোকজনও ছিল। পুলিশ এসে দুই পক্ষকে সমঝতার কথা বলে ফেরত পাঠিয়েছে। আজ হঠাৎ করে পুকুরের সব মাছ ভেসে ওঠেছে। তখন শহিদুল ও চেয়ারম্যান লজিকসহ তাদের লোকজনরা সবার সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে এই পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমার জানামতে শহিদুল ও চেয়ারম্যান মিলেই পুকুরে বিষ দিয়েছে। নিজেরা বিষ দিয়ে উল্টো সমিতির লোকজনদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এত ক্ষমতা আল্লাহ সহ্য করবেনা। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
পুকুর দেখভালের দায়িত্ব থাকা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, অনেক আগে থেকেই শহিদুল আমাকে বলে এই পুকুর আমার। তোর সমিতির লোকজনদের বলিস পুকুরের মাছ তুলে নিতে। বুধবার সকালে শহিদুল পুকুর পাড়ে এসে আমাকে বলে তুই এখান থেকে চলে যা। তা না হলে তোকে মারতে মারতে মেরে ফেলে দিব। ওর ভয়ে আমি এটকু দুরে গিয়ে দাড়াতেই দেখি শহিদুল পুকুরের পানিতে বিষ ছিটিয়ে দিচ্ছে। তখন আমি সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানাই।

ধুনট মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মহির উদ্দিন বলেন, ডিসিআর পাওয়ার পর থেকে আমরা শহিদুলের আতঙ্কে আছি। যা আজ সত্য হলো। সকালে খবর পেয়ে আমি পুকুরে গিয়ে দেখি মাছগুলো লাফঝাপ করছে। এর কিছুক্ষণ পর শহিদুল ও চেয়ারম্যান লজিক মিলে তাদের লোকজনদের নিয়ে পুকুর পাড়ে এসে জাল দিয়ে মাছ ধরতে থাকে। তখন আমি চেয়ারম্যানকে নিষেধ করলে তিনি আমাকে বলেন, তুই এখনই চলে যা, আর সন্ধ্যায় আমার সাথে পরিষদে দেখা করিস। লোকজন উত্তেজিত হয়ে আছে, কখন কি যে ঘটবে, তা বলা যাবেনা। আমি প্রাণ ভয়ে সেখান থেকে চলে এসেছি। আজকের ঘটনায় সমিতির কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওরা আমাদের দুইজনকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে।

অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ওই সমিতির তৎকালিন অন্তবর্তীকালিন সভাপতির নিকট থেকে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছি। সে কারনেই আমি বারবার ওই পুকুর দখল নিতে যাই। এরআগে গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে ওই পুকুরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। পরে পুলিশ এসে তা করতে দেয়নি। আজ মাছ ধরার ঘটনা সত্য। তবে বিষ প্রয়োগ করেছে ওরা। সে কারনে থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেফতারও করেছে। তবে ওই সমিতির তৎকালিন অন্তবর্তীকালিন সভাপতি আব্দুস সাত্তার ফকির শহিদুলকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জয়পুরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনম শওকত হাবিব তালুকদার লজিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করে তিনি বলেন, আমি ডিসি অফিসে মিটিংএ আছি বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন দিলে তিনি আর রিসিভ করেননি।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, পুকুরে বিষ দেওয়ার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাছ ধরার সময় পুলিশ সদস্য পুকুর পাড়ে উপস্থিত ছিলেন হাফ বস্তা মাছ তারা নিয়ে আসছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা নিউজ পেয়েছি পুকুরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে ওই সময় আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published.