কুড়িগ্রামে এক উপজেলার সরকারি বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের পায়তারা

এ আর রাকিবুল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ  কুড়িগ্রাম রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এক উপজেলার সরকারি বিদ্যালয় ও ভোট কেন্দ্র অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের পায়তারা চলছে। এতে করে চরাঞ্চলের প্রায় তিন সহস্রাধিক শিশুর পড়ালেখার ভবিষ্যত এবং এক হাজারের অধিক ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে এলাকায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা।

সরেজমিনে দেখাযায়,চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটি উত্তর খাউরিয়ার চর গ্রামের পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করেন। এসময় পার্শবর্তি রৌমারী উপজেলার খেরুয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক এবং উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ের ভবনের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে যায়। পরে তারা রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে খেদাইমারী গ্রামে ওই বিদ্যালয় ঘর নির্মাণ করে। এতে করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন ও এক সহকারি শিক্ষক উত্তর খাউরিয়া চরেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিদ্যালয়ের বাকি সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা,লায়লা খাতুন এবং মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে অন্যত্র পাঠদান চলছে। একই বিদ্যালয়ের দুই উপজেলায় দুটি ঘর হওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ওই বিদ্যালয় ও ভোট কেন্দ্র সরে যাওয়া চক্রান্তে প্রায়
সহস্রাধিকের উপর ভোটাররাও পড়েছেন বিপাকে।
উত্তর খাউরিয়ার চরের শিশু শিক্ষার্থী বিজয় শেখ, ছাব্বির,শিরিনা বলেন,আমরা আমাদের গ্রামেই স্কুল চাই। খেদাইমারী গ্রামে স্কুল হলে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতে করে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে।

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন, জোলেখাসহ অনেকেই বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের চরে ছিল এখানেই পুন:নির্মান করতে হবে। এটা আমাদের ভোট কেন্দ্র। আমাদের শিশু সন্তানরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলায় গিয়ে কেন পড়াশোনা করবে? বিদ্যালয়ের তিন সহকারি শিক্ষক তাদের সুবিধার্থে এখানকার বিদ্যালয় অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়টি ভোট কেন্দ্র হওয়ায় নিজেদের দখলে রাখতে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম চিলমারী উপজেলা বিদ্যালয়টি রৌমারী এলাকায় নেবার ষড়যন্ত্র করছেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন বলেন,স্কুলটি ভেঙ্গে যাবার পর খাউরিয়া চরের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে কার্যক্রম ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের তিন সহকারি শিক্ষক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভাড়াটিয়া লোকবল দিয়ে রৌমারী উপজেলার খেদাইমারী গ্রামে বিদ্যালয়ের টিনসহ অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকে অবহিত করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার বলেন,বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে আমাকে কোন অবগত না করেই রৌমারীতে নিয়ে যায় তিন সহকারি শিক্ষক। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। আমাদের এলাকার স্কুল আমাদের এখানেই পুন:নির্মাণ করতে হবে। এটা আমাদের ন্যায্য দাবী ।

নয়ারহাট ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলী বলেন,এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হলে তিনি আমার সাথে খুবই খারাপ আচরন করেন। শুধুমাত্র ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্কুলটি অন্য উপজেলায় নিয়ে যাবার ষড়যন্ত্র করছে।

সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,বিদ্যালয়টি রৌমারী উপজেলার সীমানায় প্রায় ৩৩বছর থেকে ছিল। বর্তমান নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করেছেন। আমরা তিন শিক্ষক সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন,বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে যাবার কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনের অনুরোধে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেবার জন্য ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে একটি ঘর তোলা হয়েছে। পানি কমে গেলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি পুন:নির্মাণ করা হবে।

চিলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ্ সরকার বলেন,সাময়িক ভাবে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য অন্য উপজেলায় নেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে বিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে উত্তর খাউরিয়া এলাকাতেই।

এই বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন,এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেবার কোন সুযোগ নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.