প্রতিবন্ধীদের কটাক্ষ করলেন নওগাঁ প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা

ফজলে রাব্বি হাসান, (ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি) নওগাঁ: প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটাক্ষ করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ মহির উদ্দীন এর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর তার শাস্তি চেয়েছেন স্থানীয় প্রতিবন্ধীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার ( ৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাণীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে  ছাগল ও ভেড়ার পিপি আর রোগমুক্ত করণের টিকা প্রদান কার্যক্রমের  উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতীথির বক্তব্যে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন প্রতিবন্ধীদের কটাক্ষ করে কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে, স্মার্ট মানুষ দরকার। প্রতিবন্ধী মানুষদের দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যায় না। নেংড়া,খোড়া মানুষদের দিয়ে স্মার্ট দেশ গড়া সম্বব নয়। তাই স্মার্ট মানুষ দরকার, স্মার্ট দেশ গড়ার জন্য। অনুষ্টানে বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীরাও উপস্থিত ছিলেন। এমন বক্তব্যের পর তারা চরমভাবে ব্যতিত হয়েছেন ও কষ্ট পেয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মুখে সরাসরি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এমন কথা বলা উচিত নয় বলে তারা এই কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন।

অনুষ্টানে উপিস্থত ছিলেন উপজেলার খট্টেশর ইউনিয়ন এর প্রাণীসম্পদ সেবা ও পরামর্শদানকারী নাহিদ আক্তার নয়ন। কথা হলে তিনি বলেন, আমি নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবুও জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছি কারো করুণা ছাড়াই। সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে তিনি কিভাবে আমাদের কটাক্ষ করে এমন কথা বলতে পারেন। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরাও ভূমিকা রাখতে রাখছি।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদেরও ভূমিকা রয়েছে। দেশের অনেক সেক্টরে প্রতিবন্ধীরা ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকার প্রতিববন্ধীদের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন। এই কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করছি। এমন কথার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

অনুষ্টানে অংশগ্রহণকারী হিরেন চন্দ্র নামের আরেকজন প্রাণীসম্পদ সেবা ও পরামর্শদানকারী বলেন, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন প্রতিবন্ধীরে উদ্দেশ্য করে বলেছেন প্রতিবন্ধী মানুষদের দিয়ে স্মার্ট  বাংলাদেশ গড়া যায় না। নেংড়া,খোড়া মানুষদের দিয়ে স্মার্ট দেশ গড়া সম্বব নয়। এমন কথা বলা তার উচিত হয়নি। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অন্য উদারহণ দিতে পারতেন। তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বিয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁ সরকারি কলেজেন সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করি নানাভাবে প্রতিবন্ধীরা বৈষম্যের শিকার। এ বৈষম্যই তাদের সমাজ থেকে ধীরে ধীরে দূরে ঠেলে দেয়। এর ফলে তারা সমাজের বাকি দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। সাংবিধানিকভাবে সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অধিকারের কথা বলা আছে। বর্তমান সরকারও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অংশীদার প্রতিবন্ধীরাও। প্রতিবন্ধীদের উদারহণ টেনে তাদের কটাক্ষ করে কথা বলা একজন কর্মকর্তার উচিত হয়নি। এমন বৈষম্যেমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন আচরণ হতাশাজনক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দীন বলেন, আমি প্রতিবন্ধীদের ইঙ্গিত কোন ধরনের কথা বলিনি। যে বা যারা অভিযোগ করেছেন তাদের অন্যকোন উদ্দেশ্য বা ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকতে পারে। তার পরও আমি বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। এর বেশি কিছু বলার নেই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.