যৌথ বাহিনীর অভিযানে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক শিশু ও নারী-পুরুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান : বান্দরবানের রুমা উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ের লাইরুনপি পাড়া ও ইডেন পাড়ায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের আস্তানা ঘিরে রেখেছে যৌথবাহিনী। যৌথ বাহিনী অভিযানে ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুকে সরিয়ে উপজেলা সদরে মারমা নিয়ে আসা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত থেকে লাইরুনটি পাড়া ও ইডেনপাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী। আজ ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে শতাধিক নারী ও শিশুদেরকে নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে এনে রুমার লুংঝিরি পাড়ায় অবস্থিত মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ভবন ও বাংলা পাহাড়ে অবস্থিত খ্রিস্টান ফলোশিপ অফ বাংলাদেশ (সিএফবি) হোস্টেলে রাখা হয়েছে। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রুমার মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শোয়ে প্রু চিং বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওয়েল ফেয়ার ভবনের সামনে বম সস্প্রদায়ের নারী ও শিশুদের জড়ো করেছে বলে জেনেছি, তবে সেখানে কোন পুরুষ নেই।

তিনি আরো বলেন, সম্ভবত তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব শিশু নারীদেরকে আমাদের ওয়েল ফেয়ার ভবনের সামনে জড়ো করা হতে পারে।
রুমার লুংঝিরি পাড়ার কারবারি শৈহ্লাউ মারমা বলেন, সকাল ছয়টা-সাতটা থেকে ওয়েলফেয়ার ভবনে শিশু ও নারী জড়ো হতে শুরু হয়েছিল, সেখানে বয়স্ক পুরুষ ১০ জনের মত দেখা যায়।

জানা গেছে, বিগত বছরে কেএনএফ এর ভয়ভীতি ও যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারনে জীবন বাঁচাতে ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারী সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের ৫১ টি পরিবারের ১৪০জন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মারমা ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে আশ্রয় গ্রহন করলে তারা ৮দিন পর বাড়ি ফিরে যায়। একই বছরের ২০ এপ্রিল রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের মুলপি পাড়া থেকে মোট ৪৯ পরিবারের শিশুসহ নারী-পুরুষ মোট ২৩৬ জন একই ভবনে আশ্রয় গ্রহন করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা বাড়ি ফিরে যায়।

উল্লেখ্য,গত ২ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রুমা উপজেলায় কেএনএফ কর্তৃক সশস্ত্র হামলা, সরকারি কর্মকর্তা ও পথচারীদের জিন্মি করে হামলা, অর্থ লুটের উদ্দ্যেশে সোনালী ব্যাংকে হামলা করে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র লুট করে নেওয়া হয় এবং ৩ এপ্রিল থানচি উপজেলায় স্থানীয়দের জিন্মি করে গুলি ও ২টি ব্যাংকে লুট এবং রাতে ব্যাপক গোলাগুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কেএনএফ। এরপর মূলত কেএনএফ দমনে যৌথ অভিযানে নামে যৌথ বাহিনী।

বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় দফায় দফায় ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় ৮টি মামলা হয়েছে। কেএনএফের সহযোগী লাল লিয়ান সিয়াম বম ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয় চেওসিম বমসহ ১৯জন মহিলা ও ৩৬জন পুরুষসহ মোট ৫৫জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সস্ত্রাসীদের আস্তানা ঘিরে রাখা ও স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাজাহান ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি, আপনাদের পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এই প্রতিবেদন লেখার পর্যন্ত অভিযানে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.