সাইবার অপরাধ এখন ঘরের দোরগোড়ায় তাই সচেতন হই সবায়

কালের সংবাদ ডেস্কঃ চলতি বছরের মে মাসে প্রকাশিত সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে দেশে নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে। ২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সাইবার স্পেসের অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য তুলে ধরেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

২০১৮ সালে পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করে হয়রানির হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২৩ এ হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশে। ফটোশপে ছবি বিকৃত করে অনলাইনে প্রচারের হার ২০১৮ সালে ছিল ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৮ সালে সংঘটিত অপরাধের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের হার ছিল ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বর্তমানে এ হার কমে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা।

অপরাধ ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে এতকিছুর পরও দিন দিন কমছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগের হার। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ। ২০২৩ সালে এসে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রবণতা কমার পেছনে তাদের অজ্ঞতাকেই প্রধান কারণ বলছে গবেষণা।

২০২৩ সালের জরিপ বলছে, ২৪ শতাংশ ভুক্তভোগীই জানেন না কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়। এছাড়া ঘটনা গোপন করার প্রবণতার কথা জানিয়েছেন ২০ শতাংশ ভুক্তভোগী এবং আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ের কথা জানিয়েছেন ১৮ শতাংশ ভুক্তভোগী। আর যারা আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন তাদের মধ্যে সিংহভাগ ভুক্তভোগীই জানিয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

২০২৩ সালের জরিপে এ হার মোট অভিযোগকারীর ৮০ শতাংশ। বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে তথ্যের ব্যবহার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে নিরাপদে কাজ করার জন্য অনলাইন স্পেসে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকে শারীরিকভাবে কাজ করার ঝামেলা এড়াতে চান। তবে এখানে সাইবার অপরাধীরা তাদের বিপদে ফেলছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না নেয়ার হারটা বিপজ্জনক। এর পেছেনে ভুক্তভোগীদের প্রমাণ হাজিরের প্রক্রিয়াগত জটিলতাকে দায়ী করছেন তিনি। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) ডেটাবেজ বলছে, ২০২১ সালে সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ শতাংশই ‘সেক্সটরশন’র ভুক্তভোগী। যাদের মধ্যে পুরুষ ২৩ জন ও নারী ১১৭ জন।

উন্নত প্রযুক্তি, সহজ অ্যাক্সেস ও দিনকে দিন নতুন প্ল্যাটফর্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে সাইবার অপরাধও।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.