কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ১০৮ কক্ষবিশিষ্ট মাটির বাড়িটি

মোহাম্মদ আককাস আলী, প্রতিনিধি মহাদেবপুর : বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দক্ষিণ মহাদেশের সবচেয়ে বড় ১০৮ কক্ষবিশিষ্ট মাটির বাড়িটি। এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে অবস্থিত। সখের বশে অত্র এলাকার খড় ব্যবসায়ী প্রয়াত শমসের মন্ডল ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করেন এই ১০৮ কক্ষবিশিষ্ট মাটির বাড়িটি। যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই মাটির বাড়িটি। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা রাজপ্রাসাদের মতো। পায়ে হেঁটে একবার বাড়ির চার ধার চক্কর দিতে সময় লাগে ৬ থেকে ৮ মিনিট। বাড়িটির নাম ‘মণ্ডল ভিলা’ হলেও বর্তমানে এটি ‘নওগাঁর মাটির প্রাসাদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
 মানুষ, মাটি ও প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ গ্রামবাংলার মাটির বসতবাড়ি। শীতকালে উষ্ণতা প্রদান আর গ্রীষ্মকালে আরামদায়ক তাপমাত্রার আধার অনন্য এই মাটির বাড়ি। মাটির বাড়ি গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসি হিসেবে খ্যাত।
১৯৮৬ সালে একটি পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়েই প্রায় ছয় বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হয় এই বিশাল দোতলা ১০৮ কক্ষ বিশিষ্ট মাটির বাড়িটি।
এ ঐতিহ্যবাহী মাটির প্রাসাদটি তৈরি করতে মাটি, খড় ও পানি দিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয় মাটি, খড়, তালগাছের তীর, বাঁশ, টিন ও কাঠ। বাড়িটির দৈর্ঘ্য ৩০০ ফুট ও প্রস্থ ১০০ ফুট। ছাউনি দেওয়ার জন্য লেগেছে প্রায় ২০০ বান্ডেল টিন। মাটির দেয়ালে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। সামনেই আট বিঘা আয়তনের বিশাল পুকুর। আর আঙিনার আয়তন তিন বিঘা। গাছগাছালিতে ঘেরা বাড়িটি নিরিবিলি। বাড়িটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।
বাড়িটির মালিক প্রয়াত শমসের আলী মণ্ডলের ছেলে ফারুক হোসেন জানান, তার বাবা ও চাচা প্রয়াত তাহের আলী মণ্ডল অনেকটা শখের বশে বাড়িটি নির্মাণ করেন। এ জন্য তারা মোট ১৭ বিঘা জমি নির্ধারণ করেন। আট বিঘা জমিতে পুকুর খনন করেন মাটি ও পুকুরের জন্য এবং ছয় বিঘা জমিতে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করেছিলেন। পুরো বাড়ি নির্মাণে সময় লাগে প্রায় এক বছর। তিনি আরও বলেন, ১০৮ কক্ষের এই বাড়িতে প্রবেশের বড় দরজা আছে সাতটি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৩টি। ৯৬টি বড় ও ১২টি ছোট কক্ষ রয়েছে বাড়িতে।
প্রয়াত তাহের আলী মণ্ডলের নাতি সাকিব আলী মণ্ডল বলেন, আমার দাদাদের অনেক শখের এই বাড়ি। বর্তমানে বাড়িটিতে আমার বাবা, চাচা ও ফুফুদের পরিবার মিলে ৪০ জন বসবাস করছি। তবে বর্তমানে বাড়ির ভেতরের ফাঁকা অংশেও তৈরি করা হয়েছে আরেক বাড়ি। বর্তমানে বাড়ির শেষ অংশে ইট দিয়ে কিছু আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ফলে আগের মতো বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আর সব ঘর দেখা যায় না এবং সব ঘরেও প্রবেশ করা যায় না। যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে গ্রামবাংলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
নওগাঁ শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং মহাদেবপুর উপজেলার সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে চেরাগপুর ইউনিয়নে আলীপুর গ্রাম। নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক সড়কের তেরমাইল নামক মোড় থেকে পশ্চিমে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পিচঢালা পথ পেরিয়ে যে কোনো যানবাহনে যাওয়া যায় ওই গ্রামে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *