বর্তমানে রাষ্ট্র কি আসলে মেরামতের কাজ চলছে, কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় যে “জনগনই ক্ষমতার উৎস” নাকি অন্য কিছু

কালের সংবাদ ডেক্সঃ শুধু বড় বড় অবকাঠামো নয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা সূচকেও অনেক এগিয়েছে এদেশ এখন।

স্বাধীনতা পৃথিবীর অভিধানের সবচেয়ে মিষ্টি শব্দ। একটি জাতির জন্ম। নেতা “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান”। পাওয়া-না পাওয়া, আশা-হতাশা, অর্জন-বিসর্জনের মহাকাব্য। কোনো সংশয় নেই, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ১৯৭১। আহা কতো বলিদান, কতো আত্মত্যাগ।

কোটি কোটি কৃষক, শ্রমিক ও প্রায় ১০০০ বাঙ্গালী সৈন্য পাকিস্তানের সময়ের মুক্তিযাদ্ধা বাহিনী বদলে দিয়েছে ভৌগলিক ও সামাজিক কাঠামো।

বর্তমানে একেকটি অবকাঠামো বদলে দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোও।

কতো বলিদান, কতো আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে এদেশের জন্ম তা এখনো বেঁচে থাকা রাজাকার-আলবদররা ও তাদের বংশধররা শিকার করেনা।

আসলে মুক্তিযাদ্ধার লিষ্ট করবার কি দরকার ছিলো বা কার বুদ্ধিতে এই কাজ সুরু হয়েছিলো তা আমি মনে করতে পারছিনা। দুস্থ্য বা দরিদ্র মুক্তিযাদ্ধাকে ভাতা দেবার দরকার, বড়লোক মুক্তিযাদ্ধাকে ভাতা দেবার দরকার নাই। এদেশের সবায় সব ধর্মের মানুষই মুক্তিযোদ্ধা সুধু মাত্র রাজাকার-আলবদররা বাদে। তাই রাজাকার-আলবদরের লিষ্ট দরকার॥

এক সময় ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের বাংলাদেশ আজ হয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মঙ্গার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছে এক কল্পকাহিনী। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ছোঁয়ায় এসেছে নতুন গতি।

পদ্মা সেতুই দেশের একুশটি জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে। ফলে ওইসব জেলার সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভিতকে নাড়া দিয়েছে। এসবই সাফল্যে গাথা। সাফল্যের আরেক স্তম্ভ পায়রা বন্দরও দেশকে এগিয়ে নিয়েছে অনেকদূর।

উন্নয়নের যে ঊর্ধ্বগতি ঠিক তার বিপরীত নিম্নগতিতে নেমেছে নিচের দিকে গণতন্ত্রের যাত্রা।

১৯৭৫ পরবর্তী আশির দশক জুড়েই পরবাস থেকে মুক্ত হওয়ার সংগ্রাম করতে হয়েছে বাঙালিকে। স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলনে দিনের পর দিন রাজপথ ছিল উত্তাল। একদিকে হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ অন্যদিকে কারফিউ, গুলি চলে নির্বিচারে। নূর হোসেন, ডাক্তার মিলনসহ ও বিএনপি’র সময় কৃষক অনেকের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হয় দেশ।

মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ইচ্ছাকে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে নানা কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশের সংবিধান কি এমনটায় আশা করেছিলো ?

যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানেরও মূলনীতি হইবে।’ প্রশ্ন হলো আসলে কি তা হয়েছে?

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দিয়ে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয়। দায়িত্ব নেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সরকারের অধীনে নির্বাচনে দীর্ঘ একুশ বছর পর আবার মুক্তিযাদ্ধের সরকার আওয়ামী লীগ ক্ষমতার স্বাদ নেয়।

সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়। যার একটিতে বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ও আরেকটিতে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। কিন্তু বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্হাকে কুলষিত করে ফেলে। সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় সেই কারণে। অবশ্য এতে উচ্চ আদালতের একটি রায়কে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনে সরকার। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ঐ দু’টি নির্বাচন হওয়া নিয়ে হয়েছে বহুকথা।

মনে রাখতে হবে নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের মৌলিক-যৌতিক সৌন্দর্য (Elections are the fundamental beauty of democracy)।

৭ই জানুয়ারি হতে যাচ্ছে দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা কিছু দল নেই। সরকারি দল আওয়ামী লীগ, তাদের শরিক, মিত্ররা ও কিছু বিএনপি সমমনা দল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

কারণ ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেননি বা অনেকে ইচ্ছা করেই ভোট দিতে যাননি।

আবার বিএনপিসহ অনেক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এখনও যাচ্ছে। এই কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা অংশ নিচ্ছেনা। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ ক’টি দেশ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ দিয়েছে।

নির্বাচনী উৎসব এখন বিভক্ত হয়ে গেছে।

নির্বাচনে বাধা সংক্রান্ত যাবতীয় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর এমন ঘটনা এই প্রথম।

সবমিলিয়ে গণতন্ত্র এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এই দেশ ছিলো বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর মঙ্গার দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এই দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেয়া হয়েছিল। সেই দেশ এখন এসব কিছুকে ছাপিয়ে উন্নতির পথে অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশ আজ মর্যাদার এক নাম। কিন্তু গণতন্ত্রের যাত্রা নিয়ে মাঝে মাঝে এতো সব উন্নয়নের সুফলকে তুচ্ছ করে তুলছে।

এখানে অনেক সময় বুঝতে অসুবিধা হয় যে জনগনই ক্ষমতার উৎস নাকি অন্য কিছু। বর্তমানে রাষ্ট্র কি আসলে মেরামতের কাজ চলছে॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.