কালের সংবাদ ডেক্স ঃ সাধারণ চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ, শিক্ষা খরচ কমানোর কোন সুযোগ নেই।
কিন্তু কমে যাচ্ছে ব্যবসা থেকে আয়, খরচ তো প্রতিদিন বাড়ছেই। ঋণ নিয়ে ব্যবসার ঋীন পরিষোধের চাপও বাড়ছে। এতে চিন্তায় পড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসুস্হ হচ্ছেন বেশী।
মা, স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে পাঁচ-ছয় সদস্যের পরিবার ঢাকার কোন অল্প বাসা ভাড়ার এলাকায় একটি ভাড়া নিয়ে থাকতে গেলে। মাস শেষ হলেই মিনিমাম ১৪-১৫ হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিতে হয়। ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়লে তার বেতন, টিউশন ফি, যাতায়াত ভাড়া নিয়ে তার পিছনেও মাসে ৫-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পাঁচজন সদস্যের জন্য মাসে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকার বাজার করতে হয়। বৃদ্ধ মা ও নিজেদের চিকিৎসা, ওষুধ বাবদ আরও ৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয় প্রতিমাসে। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়। ব্যয়ের এই হিসাবটা প্রতিমাসে একটু একটু করে বাড়লেও আয় বাড়ছে না।
যদি আয় থেকে তার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। টান পড়ে মূলধনে। এসব হিসাব করলে চিন্তুায় পড়ে যাচ্ছে মানুষ। দোকান ভাড়া, গোডাউন ভাড়া, বাড়ি ভাড়া দেয়ার পর হাতে টাকা থাকে না। একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যদি ২০-২৫ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়। সেই ঋণও পরিশোধ করতে হয় প্রতিমাসে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সংলাপে বলেন, ঢাকায় ৪ সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। এটাকে রেগুলার ডায়েট বলছে সিপিডি। এখানে ২৫টি খাদ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ছোট করলে ব্যয় দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্যতালিকা। কিন্তু নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের যে আয় তা দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনে টিকে থাকা কঠিন। ২০২২ সালে রাজধানীতে ৪ সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে প্রতি মাসে খরচ ছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। আর খাদ্য তালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ছোট করলে ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। অর্থাৎ বছর বছর সাংসারিক খরচ যে বাড়ছে সেটা স্পষ্ট।
সংসারের বোঝা দিন দিন ভারি হচ্ছে। হোসেনের একটি চায়ের দোকান আছে। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ৪ জনের পরিবার। তার মাসিক আয় কম, তাই ব্যয়ও করেন সেই হিসাবে। ৬ হাজার টাকায় টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকেন। এক মেয়ে স্কুলে ও ছেলেকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করান। লেখাপড়ায় তাদের প্রতিমাসে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চাল, ডাল আর কাঁচা সবজি কিনতেই খরচ হয় ১২-১৩ হাজার টাকা। সর্বসাকুল্যে মাসে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয় তার। তবে চায়ের দোকান করে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো আয় হয়। মারুফ বলেন, বাজারে একটু কমদামি পণ্য কিনে খরচ সামলানোর চেষ্টা করি।
আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে, তার চেয়েও বেশি হারে বাড়ছে দেশের স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম।
বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারে কমছেনা।
অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও সব সময়ই ঊর্ধ্বমুখী। এতে বোঝা যায় বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে।
লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই খাদ্যব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ জাতীয় পণ্য।
এতে দারিদ্র্যতা বাড়ছে কাজের মজুরি না বাড়ার কারণে। এতে সামাজিক নিরাপত্তার জালগুলো খণ্ড-বিখণ্ড এবং রাজনৈতিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষিত সমাজ। দামের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার ব্যবস্হা কারন রাষ্ট্রের খুব অল্প কিছু ক্ষমতাধর রাজনিতিবিদও এই ক্ষমতায়-যুক্ত আছে এই নিয়ন্ত্রণে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে আনতে পারলে জনগনের প্রতি আস্হা ফিরবে সরকারের।
রাষ্ট্র থেকে এই বিষয়ে আরও বেশি মাত্রায় ব্যয় করে পূর্ণাঙ্গ সামাজিক কর্মসূচি করা দরকার। মজুরি কাঠামোতে ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থার রিভিশন হওয়া দরকার।
‘রেন্টিয়ার’ হলো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়। রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে রেন্টিয়ার সোসাইটির পরিবর্তন দরকার। ক্ষমতা প্রবাহের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা সেখান থেকে বের হতে হবে। বাজারকে বাজারের মতো কাজ করতে দিতে হবে। কিছু ব্যবসিক এতো লাভকরছে যে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হয়ে পরছে।