কালাইয়ে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা  প্রতিনিধিঃ আর কয়েক দিন পর বাঙালী জাতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।এ উৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরি শেষ করে, এখন চলছে রং তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে নেওয়ার কাজ ।সারাদেশের মতো কালাইয়ে ও মন্দিরে মন্দিরে পুরোদমে চলছে পূজার প্রস্তুতি।পুজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন,শারদীয়া দুর্গাপূজা আগামী ২০ অক্টোবর, শুক্রবার ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয়া দুর্গাপূজা আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হলো দেবী দুর্গার বাহন সিংহসহ মহিষাসুরের প্রতিমা সঙ্গে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর। উৎসব সামনে রেখে, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কারিগররাও। পূজা শুরুর আগেই প্রতিমা গুলোকে তুলতে হবে মণ্ডপে। ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামোর মাটির লাগানো কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে রং ও সাজ সজ্জার কাজ।এ উপজেলার পুজা মন্ডপের কারিগরদের সাথে কথা বললে জানান, সামনে বেশি  সময় না থাকায় দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে ।
কালাই উপজেলার কয়েকটি পুজা মন্ডপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে ,দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। সুনিপুণ হাতে মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন কারুকার্যময় অলঙ্কার। আর সেই অলঙ্কার প্রতিমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন অনন্যা রূপে। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন দেবী দূর্গাকে সকলের কাছে অপরূপ সাজে প্রদর্শন করার জন্য। প্রতিমা তৈরিতে কোন ধরনের ঘাটতি রাখতে চাইছেন না কারিগররা।
এমনই এক প্রতিমা শিল্পী কর্ণধার মাধব চন্দ্র বর্মণ জানান যে , আমি দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১১টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের।তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি।
এ উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের পূজার প্রতিমা তৈরির কারিগর শ্রী  রাম বাবু চন্দ্র বর্মণ বলেন,আমি দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি।আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু পূজা কমিটি প্রতিমা তৈরির মজুরি বাড়াচ্ছেন না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা তা আর হচ্ছে না। প্রতিমা কারিগর আরও জানান, চলতি বছর আমার হাতে মোট ৭টি প্রতিমা তৈরির কাজ রয়েছে।
এবার বিধিনিষেধ না থাকাই আনন্দের মধ্যে দিয়ে শারদীয়া দুর্গাপুজা উদযাপন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।কালাই উপজেলার পুজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী উওম কুমার মহন্ত (বিটল) দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার বলেন, করোনা মহামারির পর আশা করছি এবার অত্যন্ত সুন্দর আনন্দের মধ্যে দিয়ে সবাই মিলে উৎসবটি পালন করতে পারব।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর যে অনুদান বা উপহার দেওয়া হয়, তা প্রক্রিয়াধীন। তালিকা অনুযায়ী মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষকে উপহার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গাপূজার কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।
কালাই উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন  একটি পৌরসভারসহ ৩০টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা উদযাপিত হবে। কালাই পৌরসভায় ০২টি, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন০৫ টি,মাত্রাই ইউনিয়ন ০৯টি,উদয়পুর ইউনিয়ন০৫টি,পুনট ইউনিয়ন ০৫টি, জিন্দারপুর ইউনিয়ন ০৪টি,পূজা মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে।
কালাই উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির  সাধারণ সম্পাদক শ্রী উওম কুমার মহন্ত (বিটল) বলেন, আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপূজা উৎসব প্রত্যক বারের মত এবারও এ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ হিন্দু,  মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই উৎসমুখর পরিবেশে পালন করবেন।আশা করি কোন অর্পিতিকর কোন ঘটনা ঘটবে না বলে মনে করেন। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কালাই উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির  সভাপতি শ্রী অশোক কুমার দও বলেন, চলতি বছরের উপজেলায় সর্বজনীনভাবে ৩০টি পূজামন্ডপে শারদীয়া দুর্গাপূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে । এবারো প্রতিটি মন্দিরে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব পালনের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে ।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সভা করা হবে । শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং মনিটরিং অব্যাহত থাকবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.