বদলগাছীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ  নওগাঁর বদলগাছীতে মুজিববর্ষের উপহার প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মসহ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানকালে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ওই ইউনিয়নে এর আগে দেয়া হয় ১৫টি ঘর। পরের ধাপে আবারও বালুভরা উত্তরপাড়ায় দেওয়া হচ্ছে ১৫টি ঘর। আর কিছুদিন পরেই বুঝিয়ে দেয়া হবে ঘরের চাবি। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া ১৫টি পরিবারের মধ্যে কয়েকটি পরিবারই স্বচ্ছল। তাদের জমি, বসতভিটা ও ঘর রয়েছে। আবার অনেকের আছে অর্ধ পাকা ঘরও। এছাড়া কারো ছেলেরা করছে চাকুরি। আবার কেউ এই এলাকার ভোটার নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সরকার কাদের জন্য এসব ঘর বরাদ্দ দিয়েছে? যাদের জমিজমা নেই। ভূমিহীন, গৃহহীন রাস্তাঘাটে থাকা মানুষরা তো এসব ঘর পাওয়ার কথা। কিন্তু তারা ঘর পাচ্ছে না। উল্টো যাদের দুই চার বিঘা জমি আছে, তারাই ঘর পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আঙ্গুর নামে স্থানীয় একজন এর কারসাজি তে ভূমিহীনদের স্থলে সম্পদশালী ঘর পাচ্ছেন। এটাই আমাদের বাংলাদেশ। জোর যার মুল্লুক তার।

সেখানে কথা হয় শিরিনাসহ অনেক হতদরিদ্র ও সচেতন নারীদের সাথে। শিরিনা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা অসহায় ও দরিদ্র। আমার মেয়ে মালা আমাদের সাথে থাকে। আমার মেয়েও অসহায়। মেয়ে ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তার নামে ঘর বরাদ্দ হয়নি।আমার মেয়ের নাম কেটে দিয়ে তাদের পছন্দের ব্যাক্তি বরেন নামে এক লোকের মাকে দিয়েছে। তিনি ক্ষোভের সহিত বলেন হয়তোবা টাকা দিতে পারিনি, তাই আমার মেয়ের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

শাহানাজ নামে আরেক নারী তার মেয়ে মিমের জন্য আবেদন করেছিল মাথা গোঁজার একটি ঠাঁই পাইতে। তিনিও অভিযোগ করেন আঙ্গুর এর কারনে তার মেয়ের নামেও জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেই কাঙ্খিত ঘর।

অবশ্য বালুভরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আল এমরান বলেন তিনিও মালার জন্য সুপারিশ করেছিল। কিন্তু মালা না পাওয়াতে একটু হতাশ হয়েছেন। মালা প্রকৃত ভূমিহীন। অনিয়ম হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে সরাসরি কিছু না বললেও তিনি বলেন, এটা বালুভরা ইউনিয়ন। এখানে অনেক প্রকৃত ভূমিহীন আছে। ভূমিহীনদের স্থলে স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা ঘর পেয়েছে। রতন নামে একজনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার বাড়ি বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে। তিনি একটু ক্ষোভের সহিত বলেন এর আগের বরাদ্দের সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাকে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু এবার আমাকে সেভাবে কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া এই ঘর বরাদ্দে তিন বার তালিকা পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাকে ছাড়াই টিডিআরসহ অনেকে যাচাই করে তালিকা পাঠিয়েছে। তালিকা পরিবর্তনের পিছনে কার হাত থাকতে পারে এলাকার সকলেই জানেন সাংবাদিকদের বলেন আপনারা বিষয় টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করেন। তাহলে প্রকৃত বিষয় উদঘাটন হবে।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজ্জাক বলেন, আমার ওয়ার্ডে অসংখ্য ভূমিহীন পরিবার থাকা সত্বেও তাদেরকে না দিয়ে কিছু স্বচ্ছল লোককে ঘর দিয়েছেন। যেগুলোর সুপারিশ করেছেন আঙ্গুর। আমার সুপারিশে মাত্র ৬জন পেয়েছেন, চেয়ারম্যান পেয়েছেন ২ টি। আমি এবং চেয়ারম্যান প্রকৃত ভূমিহীনদের দিয়েছি। কিন্তু বাদবাকি ঘর প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব এর ভাই আঙ্গুর এর মধ্যস্থতায় স্বচ্ছল ব্যাক্তিরা ঘর পেয়েছেন। এই ওয়ার্ডে আরও ভূমিহীন ছিলেন বলে তিনি জানান।

টিডিআর কালিপদ মালাকার তালিকা দুবার পরিবর্তনে কথা স্বীকার করে বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। এছাড়া মেম্বাররাও জানেন। আর সকলকে নিয়ে যাচাই করে বরাদ্দ দিয়েছেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।

এ অভিযোগের ব্যাপারে আঙ্গুরের সাথে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এবিষয়ে বদলগাছীর ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যেসব স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের নামে ঘর পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আপনারা নামগুলো আমার কাছে দেন আমরা উপজেলা প্রশাসন বিষয় টি খতিয়ে দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.