বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে কদর বাড়ছে তাল পাতার তৈরীর হাতপাখা

মাগুরা প্রতিনিধি, খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন: সারাদেশে রুদ্ধশ্বাস গরম চলছে গ্রীষ্মকাল, পর্যাপ্ত পানি নেই খাল, বিল ও পুকুরে। কিছু এলাকার টিউবওয়েল গুলোই পানি উঠলেও অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানি উঠাতে ভীষণ বেগ হতে হচ্ছে। এর মধ্যে প্রচন্ড তাপদাহ ও রূদ্ধশ্বাস গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। তাই দেহ শীতল করতে অনেকটা বাধ্য হয়েই মানুষ বেছে নিয়েছে তাল পাতার তৈরি হাত পাখা। তাল গাছের পাতা দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এই হাত পাখা গ্রামীণ জনজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে তাল পাখার জুরি নেই সুদীর্ঘ কাল থেকে। তাল গাছের কান্ডসহ পাতা কেটে রোদে শুকিয়ে বাশের শলা ও সুতার সহযোগিতায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় এই হাত পাখা। প্রকৃতির বৈরীতায় অসহনীয় গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। তবুও থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পথচলা। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলেই দুর্বিসহ গরমে হাঁসফাঁস করছে কর্মব্যস্ত মানুষ। তাইতো গাত্র শীতল করতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যবহার করছেন সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি তাল গাছের পাতা দিয়ে তৈরি এই হাত পাখা।মাগুরা জেলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি হাত পাখা বিক্রি করা হচ্ছে ৪০-৭০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হতো ১০-৩০ টাকায়। দূরদুরান্ত এলাকা থেকে ক্রয় করে এনে বিক্রি করার কারণে ও বিভিন্ন জিনিসের বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রাখতেই তাল পাখার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পাখা বিক্রেতা সুধীর বিশ্বাস বলেন, আমি আজ পাঁচ বছর ধরে পাখা বিক্রি করছি। গত কয়েক বছরের চেয়ে এই বছরের শুরুতেই তুলনামূলক অনেক বেশি পাখা বিক্রি হয়েছে তাতে বেশ লাভ হয়েছে।
অপর একজন পাখা বিক্রেতা অজিৎ বিশ্বাস বলেন, অন্য ব্যবসায়ের পাশাপাশি গরমের সিজন আসলেই পাখা বিক্রি করে কিছু টাকা দেড়ি করতে পারি তবে অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় পাখার দাম কম থাকায় তা আর এবছর হবে না। তবে পাখা ক্রেতারা বলছেন, তাপদগ্ধ জীবনে একটু প্রাণের আস্বাদন পেতে বৈদ্যুতিক পাখার বিকল্প হিসেবে তাল পাখা ব্যাবহার করেন তারা। পাশাপাশি ২০ টাকার পাখা ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় সুলভ মূল্যে পাখা ক্রয় করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। প্রতি বুধবার ও শনিবার উপজেলা সদর আড়পাড়া বাজারে চলে তালপাখা বিক্রির ধুম। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ একটি দুটি ক্রয় করে ছুটেন গন্তব্যের দিকে। নিমিষেই ফুরিয়ে যায় শত শত তালপাখার গাইট। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এখানে আসে তালপাখা ক্রয় করতে। আমজাদ, তুহিন, রোকেয়াসহ এমনি কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রচণ্ড গরমে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন চার্জার ফ্যানের পাশাপাশি তালপাখা পরিপূরক ভুমিকা পালন করে। তাল পাখার পাশাপাশি প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন বাহারি রঙের হাত পাখা বিক্রি হচ্ছে সমানে।
তবে প্লাস্টিকের হাত পাখার চেয়ে তাল পাখার কদর বেশি ক্রেতাদের কাছে। এই দূর্বীষহ গরমে হত-দরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশু, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদেরকে একটু স্বস্তি দিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে জনপ্রতি একটি করে হাতপাখা প্রদানের আহ্বান জানান শিক্ষক ও গবেষক শ্রী ইন্দ্রনীল। পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকে বেশি বেশি পানি পান করা ও ছায়া শীতল জায়গায় অবস্থান করার অনুরোধ জানান তিনি

Leave a Reply

Your email address will not be published.