মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের উত্তরপাশে গত কয়েকদিন ধরে। কালাই পৌরশহরের সড়াইল এলাকায় ময়লার একটা ভাগাড়ে দেখা গেছে।কালাই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন অনেক ময়লার স্তুপ জমা হয়।সারাদিন সংগ্রহের পর রাতে ট্রাকে করে নিয়ে ময়লাগুলো সড়াইল মহল্লার অদূরে এই ভাগাড়ে ফেলা হয়।এসব ময়লার সঙ্গে যায় পলিথিন,প্লাস্টিক,মোটা কাগজ, হাড়, ছোটখাট লোহার টুকরোসহ নানা জিনিসপত্র। রাতে ভাগাড়ের যে স্থানে এসব ফেলা হয় সকাল থেকে সেগুলো খুঁজতে কাজে লেগে পড়েন অনেক নারী-পুরুষ।স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও ভাগাড়ের ভাঙ্গারি কুঁড়িয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
ভাগাড়ের স্তুপে দেখা হয় ৪৫ বছর বয়সী নাজমুল হকের সাথে।তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের জামুরহাট সরদারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।প্রায় ৭ বছর ধরে তিনি এই ময়লার স্তুপ থেকে পলিথিন, প্লাস্টিক, মোটা কাগজ, হাড়, ছোটখাট লোহার টুকরোসহ নানা জিনিসপত্র সংগ্রহ করেন।জীবনযুদ্ধে তার মত আরও অনেকেই সংসার চালাতে ফেলে দেয়া এসব ভাগাড়ের উপর নির্ভরশীল।
নাজমুল হক বলেন,ছয় সদস্যের সংসার।বাবা-মা বৃদ্ধ।ছেলে-মেয়েও ছোট।প্রথম দিকে মাঠে-ঘাটে কাজ করতেন।১০ বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েছেন।স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেননা।তবুও সবার খাবার যোগান দিতে হয়।অন্যের একটি ভ্যান ১০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন ভাগাড়ে গিয়ে এসব ভাঙ্গারি কু্ঁড়ান।অনেক সময় তার ১২ বছরের ছেলে আল আমিনকেও সাথে নিয়ে আসতে হয়।সারাদিন তাকে ভাগাড়ের ময়লার ওপর থাকতে হয়।দুপুরের খাবারও ময়লার উপর বসেই সেরে নিতে হয়।এখন দুর্গন্ধ নাকে আর আসে না।কোনো কারণে একদিন ভাগাড়ে না যেতে পারলে সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়।ভাঙ্গারি যা পাওয়া যায় তা নিয়ে সন্ধ্যার আগেই হাজির হতে হয় মহাজনের ঘরে।প্রতিদিন গড়ে ৭/৮শ টাকার কুড়ানো ভাঙ্গারি বিক্রি করে সংসার চালান।তিনি আরও বলেন, এই ভাগাড় স্তুপে প্রতিদিন সকালে এসে দেখি কয়েকটি কুকুর ক্ষুধা নিবারনের জন্য খাবার খুঁজছে।পা দুটি দিয়ে ময়লা আঁচড়ে খাবার খুঁজে বের করে খাচ্ছে।সাথে কতকগুলো কাঁকও খাবার খাচ্ছে।এই যে এখানে খাবারের জন্যই কাঁক, কুকুর, শকুন এসেছে।আমিও প্রয়োজনেই এসেছি।তাছাড়া এখন পর্যন্ত তার কোনো বড় অসুখ হয়নি।ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধ তার শরীরে সয়ে গেছে।ভাগ্যের খেলায় এই ভাগাড়েই যেন তারা পুরো পরিবারের জীবিকার ব্যাবস্থা করে নিয়েছেন।
কালাই পৌরশহরের ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমিও এসব কুঁড়াচ্ছি,এখন পর্যন্ত বড় কোনো অসুখে পড়িনি।মাঝে মধ্যে একটু জ্বর-স্বর্দি হয়।আমি তো এসি বা ফ্যানের বাতাসেও থাকি না।ভাগাড়ের ওপর সারাদিন রোদ-বৃষ্টির নিচে থাকি, তাতে শরীর পুড়ে গেছে।এই শরীরে আর কিছুই হবে না।
জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা.ওয়াজেদ আলী বলেন, এমনিতেই রোগ বালাইয়ের শেষ নেই, তার উপর ময়লার ভাগাড়।নিঃসন্দেহে ময়লার ভাগাড় রোগ-জীবাণুতে পরিপূর্ণ। ওই এলাকার বাতাসও দুষিত হচ্ছে।সেখানে কাজ করলে নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। আর দীর্ঘ সময় কাজ করলে তো অবশ্যই বিভিন্ন রকম অসুখে ভুগতে হবে তাকে।