অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলে আলুর বাজার সরকারের উদ্যোগ নিয়ন্ত্রণে আসছে না

মোহাম্মদ আককাস আলী প্রতিনিধি মহাদেবপুর :
অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সরকারের নানান উদ্যোগের পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না আলুর বাজার। আলুর দাম বেড়ে এখন আকাশচুম্বী। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে ৭০/৮০টাকার নিচে আলু মিলছে না। এমনকি অর্ধেক দামে আমদানি করা আলুও দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। মূলত অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কারণে আলুর দাম কমছে না। এক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা অনেকখানি দায়ী। আলু প্রতি কেজিতে লাভসহ দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা তা মানছে না। ব্যবসায়ীরা আলু পচিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তারপরও বাজারে কম দামে বিক্রি করছে না। তারা মনে করছে ৭০ টাকা আলু বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ থাকে। সুতরাং কিছু আলু নষ্ট হলেও তাদের লোকসান নাই। কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এখনো লাখ লাখ বস্তা আলু থাকলেও তারা বিক্রি করছে না। এভাবে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করছে আলু ব্যবসায়ীরা। বাজার এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি আলু ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা বিক্রি হওয়ার কথা। আর পাইকারিতে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। বাজারের দাম বাড়িয়ে কেজিপ্রতি বাকি ২৪ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকারি তথ্যমতে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর এ সময়ে আলুর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
সূত্রমতে, অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কম দামে আমদানি করা আলুও বাজারে ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। হাজার হাজার টন আলু আমদানি করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে সরকার এবং ভোক্তা উভয়ই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ টন। তবে হিমাগার মালিকদের দাবি ভিন্ন। তাঁরা বলছেন, এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। সে হিসাবে চাহিদার তুলনায় ১০-১৫ লাখ টন আলুর ঘাটতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, গত জুন মাসে হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ৪২-৪৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়েছিল। সেই দাম এখন বেড়ে ৬২ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। হিমাগার পর্যায়ে এমন দাম আগে কখনো দেখা যায়নি। আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুতদারেরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। হিমাগার থেকে আলুর কেজিতে বাড়তি যে লাভ রাখা হচ্ছে, তার পুরোটাই মজুতদারেরা নিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.