কালাইয়ে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটে কালাই উপজেলা ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হলেও এ উপজেলার অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় গড়ে উঠেনি শহীদ মিনার। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবস পালন করা হয় শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালনই করা হয় না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানে সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকলে ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের উদাসীনতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল।
এতে করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা জেগে উঠছে না তেমনি ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস ও জানতে পারছে না তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা।
আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলো সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়। শহীদ মিনার নেই এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। আবার এর বিপরীত দিকেও আছে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আরাম আয়েশে ছুটি উপভোগ করে। যারা পালন করেন তারাও গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রী নিয়ে শহীদ দিবসে  ফুল দিয়ে দায়িত্ব পালনে ইতি টানেন।
 কালাই উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,এ উপজেলায় মোট ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে । এর মধ্যে হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭টি, মাদ্রাসা ২০টি, কলেজ ও কারিগরি কলেজ ৯টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪টি রয়েছে। এরমধ্যে ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। তবে ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন শহীদ মিনার।এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরি কলেজ মিলে ৪৬টি, তার মধ্যে ১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহীদ মিনার নির্মাণ করতে মোটা অর্থের প্রয়োজন। সরকারি বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
অথচ ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পাঠানো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দেশের যেসব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোঃ মনোয়ারুল হাসান বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাউশির নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ মিনার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কমিটির সভাপতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হায়াত  বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোকে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা যেন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.