কালাইয়ে অপরিকল্পিত শিল্পায়নে কমছে কৃষি জমি,খাদ্য সংকটের আশঙ্কা

মোঃ মোকাররম হোসাইন কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাটে কালাই উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভারসহ দিনদিন কমতে শুরু করেছে আবাদি জমির পরিমাণ। আবাদি জমির মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা, রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। যার ফলে কৃষি পণ্য উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যাপক খাদ্য সংকটে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছে এ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
কালাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে,এ উপজেলায় গত তিন বছরে২১হেক্টর আবাদি  জমিতে পুকুর খনন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায়। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন,এ সংখ্যা আরও বেশি হবে। চলতি বছরে প্রায় সাড়ে ১২হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পুকুর খনন, হিমাগার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং ইট ভাটায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রয় করার কারণে প্রায় ২শ’হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বসতি ও কল-কারখানা, ইটভাটা তৈরি এবং কৃষি জমি আইন না মেনে কৃষি জমি ভরাট হচ্ছে। সে সঙ্গে বাড়ছে ইচ্ছে মত জমির ব্যবহার। ফলে গত দিনদিন বছরে কৃষি জমির পরিমাণ কমেছে যাচ্ছে। এতে করে দিনেদিনে কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে বিচ্ছিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
প্রস্তাবিত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষি জমিতে আবাসন, শিল্প কারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো রকম অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেনো তা কৃষি জমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। অথচ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও মালিকরা তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সীমানা বাড়ানো সহ কম মূল্যে গ্রামের কৃষি জমিগুলো দখলে নিচ্ছে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত কৃষি জমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায় ,গত দুই মাসে ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে এক্সক্যাভেটর মেশিনের ব্যাটারী। তৎসত্ত্বেও প্রশাসনের অভিযানের পরেও বন্ধ হচ্ছে না পুকুর খনন ও আলুর হিমাগার নির্মাণের কাজ।এবং প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পরেই ফের শুরু হয় খনন ও নির্মাণের কাজ। স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন,এগুলো সবই লোক দেখানো অভিযান বলে মন্তব্য করেন। মামলা,জেল,জরিমানা ও খননযন্ত্র জব্দ এবং অকেজো করেও থামানো যাচ্ছে না প্রভাবশালী এই মাটি ব্যবসায়ীদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জমির মাটি বিক্রির প্রবণতা। আবাদি জমির উপরিভাগের টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।এটা কৃষি উৎপাদনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।জমির এই টপ সয়েল তৈরি হতে ২০-৫০ বছর সময় লেগে যায়  কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কৃষককে সচেতন করা হচ্ছে।তিনি আবাদি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে কৃষিজমির পরিমাণ বাড়াতে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজির আবাদ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।এছাড়া বহুতল ভবনের ছাদেও কৃষি আবাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবুল হায়াত কালের সংবাদ বলেন,মূলত এই উপজেলার প্রাণ হচ্ছে আবাদি  জমি।যেখানে সরকার এক ইঞ্চি পরিমাণ জমি আবাদি রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন সেখানে আবাদি  জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি বা হিমাগার নির্মাণে কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাটির উর্বর অংশ বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধও করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.