কেশবপুরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত

শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) যশোরের কেশবপুরে মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে দলীয় কার্যালয় চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ।

অনুষ্ঠানে কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম শহীদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলা, যুগ্ম-আহবায়ক রেজাউল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবির সুমন, পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম অটল।

অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, মঙ্গলকোট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন, পৌর ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনিছুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান কারী, উপজেলা যুবনেতা আলমগীর হোসেন, আব্দুল গফুর, পৌর যুবদলের সদস্য সচিব মেহেদী বিশ্বাস, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শামসুল আলম বুলবুল, সদস্য সচিব বাবুল রানা বাবু, পৌর সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ, উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব কেএম আজিজ, যশোর জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক ফরিদুজ্জামান ফরিদ, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আজিজুর রহমান আজিজ, সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং জাতীয় জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলেন গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের অঙ্গীকার নিয়ে। সেদিন দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রুখে দিয়ে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিলেন। সেদিনের সেই বিপ্লবে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে স্বস্তি এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেজন্যই জাতীয় জীবনে এই বিপ্লবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এ দিনের ইতিহাস বাঙালির জীবন থেকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলার জন্য এই জাতীয় দিবসটিকে বাতিল করে দিয়েছিল।

বক্তারা আরও বলেন, এ দেশের স্বাধীনতাত্তোর রাষ্ট্রীয় অনাচার, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহল নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়েছিল। শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যই গণতন্ত্রবিনাশী কর্মকান্ড শুরু করেন। সেই জন্য মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যার মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। শুরু হয় নির্মম একদলীয় দুঃশাসন। দেশে নেমে আসে অশান্তি ও হতাশার কালো ছায়া। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সংগত অধিকারগুলো হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ৭৫-এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখেন। এই অরাজক পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির সম্মিলন ঘটে এবং জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। 

আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় অনুচররা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে হত্যা করে। জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ানে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা সত্বেও 

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার জোর করে প্রায় ১৬টি বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। এদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভুত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলো। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে বিএনপির লড়াকু নেতাকর্মীদের নির্মমতায় দমন করেছে। আয়না ঘরসহ গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার এক ভয়াল দুঃশাসন কায়েম করে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনের এই অব্যাহত ধারায় গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বহু বছর মুক্তি দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীদের খুন, গুম করেছে।

পুনরায় এদেশে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। তাই আজ মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরায় নস্যাৎ করার জন্য খুনি হাসিনা বিদেশের মাটিতে বসে নানান ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সেজন্য ৭৫-এর ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার আহবান জানান বক্তারা।

আলোচনা সভা শেষে একটি র‌্যালি বের করে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। র‌্যালিতে উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, সেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, মহিলা দলের শতশত নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাস্টার কে এম খলিলুর রহমান, সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম খান, পৌর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাহাতুল ইসলাম সুজনসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, সেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদলসহ অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের শতশত নেতাকর্মীবৃন্দ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published.