জে. ওসমানী ছিলেন তিনটি দেশের সেনা অফিসার

কালের সংবাদ ডেক্স ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, যিনি জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী নামে অধিক পরিচিত।

১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ২২শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল এমএজি ওসমানী সাহেব (মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি) বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ডু ইউ থিংক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে ?’
বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘নো, আই থিংক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ্।’

ওসমানী সাহেব পুনরায় তীক্ষ্ণ স্বরে তার কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো তেইশে মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কী কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো কিছু করতে পারে। তার জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না।’

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, পঁচিশে মার্চেই পাকিস্তানিরা ক্র্যাকডাউন করবে। কী হিসাব বঙ্গবন্ধুর।

পাপা টাইগার ছিলেন তিনটি দেশের সেনাবাহিনীর অফিসার।

তার নাম শুনলে ত্রাস সৃষ্টি হতো পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্টে।

পাকিস্তানিরা তাকে ডাকতো পাপা টাইগার!

১৯৪২ সালে তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ মেজর ছিলেন।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি হয়েছিলেন একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক।

একটি দেশের স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান।
একটি দেশকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার রণাঙ্গনের অন্যতম মহারথী।

তিনিই মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী।

সুনামগঞ্জে আতাউল গণি ওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর। বাড়ি ছিলো সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়।

১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি পুরো ভারতবর্ষে প্রথম হয়েছিলেন। এই দারুণ ফলাফলের জন্য ব্রিটিশ সরকার ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার দেয়।

১৯৩৯ সালে রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দিয়ে দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪০ সালে যোগ দিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমিশনড অফিসার হিসেবে। ১৯৪২ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন ওসমানী। ১৯৪২ সালে ওসমানী ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ পদোন্নতি পাওয়া মেজর।

দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর ওসমানী যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। এসময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

তার হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাস।

১৯৬৭ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত‌ও হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ২৫ মার্চ ঢাকাতেই ছিলেন ওসমানী।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বছর চারেক আগে অবসর নেওয়া ওসমানীর সামরিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার অবগত ছিল।

তাই ওই রাতেই ওসমানীকে হত্যার চেষ্টায় হন্যে হয়ে খোঁজে পাকবাহিনীর এক কমান্ডো। কিন্তু একেবারেই ভাগ্যগুণে অনেকটা অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান ওসমানী।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ওই ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷

১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি।

জে. ওসমানীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।

প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এক একজন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয় করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা- প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী।

১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷

ব্রিটিশ গণতন্ত্রকে মডেল হিসেবে মনে করতেন ওসমানী।

চিরকুমার ও ছিলেন ওসমানী। শেষ জীবনে মেঝেতে চাদর বিছিয়ে ঘুমাতেন। নিজের সব সম্পত্তি মৃত্যুর আগেই বিলিয়ে দিয়েছেন ট্রাস্টের মাধ্যমে, যেন তা মানুষের কাজে লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.