আবু সাইদ বদলগাছীঃ নওগাঁর বদলগাছী ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সঙ্কট চলছে। সেই সুযোগে পিয়ন ও নার্স রোগি দেখছেন। ঘটনাটি উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর পাশাপাশি চরম হতাশা বিরাজ করছে। স্বাস্থ কমপ্লেক্সে মাত্র ৬ জন এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চতর ডিগ্রি নিতে বা কোর্স করতে চলে গেছেন। এ পর্যায়ে ৮ জন মেডিক্যাল এ্যসিটেন্ট দিয়ে কোন রকম চিকিৎসা সেবা চালানো হচ্ছে। বদলগাছী স্বাস্থ কমপ্লেক্সে উপ- সহকারী মেডিক্যাল এ্যাসিটেন্ট এর পদ রয়েছে মাত্র ২টি। বাঁকি ৬ জন মেডিক্যাল এ্যাসিটেন্ট ইউনিয়ন কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে এনে স্বাস্থ কমপ্লেক্সে কাজ কারানো হচ্ছে। এতে খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চল্লেও সেবার মান বাড়ছে না। অপর দিকে ডাঃ শাহাদত হোসেন সেলিম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থপেডিক্স হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মাঝে মাঝে অনুপস্থিত থাকেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক নুরু। নুরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ চিকিৎসক শাহাদত হোসেনের অনুপস্থিতিতে তিনি রোগী, দখেন।
ডাঃ শাহাদত হোসেন নিয়মিত অফিস করেন না। এমন অভিযোগে ভিত্তিতে কয়েক দিন সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। প্রায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ডা.শাহাদত হোসেনের চেম্বার তালাবন্ধ থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের অফিস ষ্টাফদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কি কারণে তিনি নয়মিত আসেন না তার সাথে কথা বলেন।
এরপর আউটডোরে ডাক্তার শাহাদত হোসেনের চেম্বারের সামনে দেখা যায় সেবা নিতে আসা আজিরুন বেগম (৬০) নামে একজন হাতভাঙা রোগী বসে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, গত ২২ দিন আগে রাস্তা দিয়ে হাটতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার কারণে আমার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। এরপর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমার হাত প্লাস্টার করে দেয়। এবং দশ দিন পর আউটডোরের পাঁচ নং রুমে দেখাতে বলে। দশ দিন পর পাঁচ নং রুমের ডাক্তার আমার হাত দেখে এক্সরে রিপোর্ট করতে বলে। আজকে কিছুক্ষন আগে রিপোর্ট দেখে আমার হাত প্লাস্টার করে দিলো। এবং চা-মিষ্টি খাওয়ার জন্য চার শত টাকা নিলো এবং আগেও তিন শত টাকা নিছে। এক মাস পর আবার এখানে আসতে বলল।
ওই রুমের ডাক্তার শাহাদত হোসেন সেলিম আজকে আসেনি, আপনাকে চিকিৎসা সেবা দিলো কে? এমন প্রশ্নের জবাবে সহজ সরল আজিরুন বেগম বলেন, সে নিজে পাঁচ নং রুমে আমার হাত দেখে চিকিৎসা করলো, এক্সরে রিপোর্ট দেখলো। একমাস পর আবার আসতে বললো। ডাক্তার দেখতে কেমন, এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ডাক্তারের দাড়ি আছে, একটু খাটো করে ফর্সা। তার মোবাইল নম্বর লিখে দিছে। কোন কিছু হলে ফোন দেওয়ার কথা বলছে। আমি তো ডাক্তার কে চিনি না বাবা। যেই মানুষ আমার হাত দেখলো তাকেই আমি ডাক্তার মনে করছি।
এরপর রোগীর কাছ থেকে নেওয়া মুঠোফোন নং এ ফোন দিলে অপরপ্রান্ত থেকে অফিস সহায়ক পদে হাসপাতালে চাকরি করি বলে জানান নুরু ইসলাম। আউটডোরের পাঁচ নং রুমে আজিরুন নামে কোন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শুধু হাতের প্লাস্টার করে দিয়েছি। এর বেশি কিছু তিনি জানাননি ।
এ বিষয়ে ডাঃ শাহাদত হোসেন সেলিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এর আগে নুরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তখন তাকে আমরা ডেকেছিলাম। কিন্তু তেমন কিছু পাইনি। তবে সে ডাক্তারের সহযোগী হিসেবে সহযোগীতা করে। কারণ আমাদের জনবল একটু কম। আর আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের জন্য নওগাঁতে অবস্থান করতে হয়। ফলে মাঝে মাঝে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হতে পারি না।
অপর দিকে ডায়াবেটিস ও হিৃদ রোগের রুগীদের (এনসিডি ) কর্নার নামে ২ নং রুমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে ও ডাক্তার সঙ্কটের নামে মাঝে মধ্যে ওই রুমে একজন সিনিয়র নার্স হাসিনা ডাইয়াবেটিস ও হিৃদ রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে ওই নার্স হাসিনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ডাক্তার সঙ্কট তাই মেডামের নির্দেশে চিকিৎসা দিচ্ছি। ম্যাডম কে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বাস্থ্য ও পপ কমূকর্তার কথা জানান।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ কানিস ফারহানার সাথে তার কার্যালয়ে স্বাক্ষাত করলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। অর্থপেডিক ডাঃ শাহাদত সেলিম সাহেবের বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলেন , দেখেন সেলিম সাহেব আমার ৩ ব্যাচ সিনিয়র। কি ভাবে তাকে নির্দেশ করি। তবুও তাকে নিয়মিত রোগি দেখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমার হয়ে আপনারা (সাংবাদিকেরা) একটু চাপ সৃষ্টি করতেন তাহলে আমার জন্য সহজ হত।