নওগাঁয় তথ্য গোপন করে একাধীক প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করায় ৩ জন শিক্ষকের বেতন বন্ধ

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টারঃ নওগাঁয় তথ্য গোপন করে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করায় তিন শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে তারা আর বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না। ঘটনাটি ঘটিয়েছেন সদ্য জাতীয়করনকৃত নওগাঁর পোরশা উপজেলার পোরশা সরকারী কলেজের শিক্ষক ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক আবু ইলিয়াস, প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক মাহফুজা বেগম ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক তাসলিমা জাহান। তাদের সরকারী অংশের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হিসাব রক্ষণ অফিসার ওয়াকিল ইসলাম। গত নভেম্বর মাসের বেতন বন্ধ করায় এ মাস থেকে তারা আর বেতন উত্তোলন করতে পারছেন না।
হিসাব রক্ষণ অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রভাষক আবু ইলিয়াস গত ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পোরশা ডিগ্রী কলেজে প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা) পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পোরশা ডিগ্রী কলেজে কর্মরত থাকা অবস্থায় গত ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ একই উপজেলার বালিচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্তু চাকুরী করেন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। তিনি এরপর ১১ নভেম্বর বালিচাঁদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করে পুনরায় পোরশা সরকারী কলেজে ফিরে আসেন এবং একই সঙ্গে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় ও পোরশা সরকারি কলেজ থেকে সকল ধরনের বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন যা সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০১৮ এর অনুচ্ছেদ ২(৯) ধারা পরিপন্থী।
কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিষয়ের অপর শিক্ষক মাহফুজা বেগম গত ২০১৫ সালের ৬ মার্চ নিয়োগ পেয়ে ওই বছরের ৯ মার্চ কলেজে যোগদান করেন। এই কলেজে নিয়োগ নেওয়ার পূর্বে তিনি গত ২০০৯ সালের ৫ মে পার্শ্ববর্তী পত্নীতলা উপজেলার আমাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর তিনি গগনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালের ১০ জুন পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি গত ১১ জুন ২০১৮ সালে আবারও কলেজে ফিরে আসে। এরপর নিয়োগ থেকে কলেজে সে নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে বকেয়া বেতন এরিয়াসহ উত্তোলন করেন।
মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অপর শিক্ষক তাসলিমা জাহান গত ২০১৫ সালের ৬ মার্চ নিয়োগ পেয়ে ওই বছরের ১০ মার্চ কলেজে যোগদান করেন। এই কলেজে নিয়োগ নেওয়ার পরে তিনি গত ২০১৬ সালের ২৮ জুন পার্শ্ববর্তী সাপাহার উপজেলার জয়পুর রাজ্যধর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এরপর তিনি গগনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করে এই কলেজে যোগদান করেন। এরপর তিনি গত ১১ জুন ২০১৮ সালে আবারও কলেজে ফিরে আসে। এরপর নিয়োগ থেকে কলেজে সে নিয়মিত শিক্ষক হিসাবে বকেয়া বেতন এরিয়াসহ উত্তোলন করেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক আবু ইলিয়াসকে কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি আর রিসিভ করেননি। অভিযুক্ত অপর দুই প্রভাষক মাহফুজা ও তাসলিমা ফোন রিসিভ করেনি তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা ওয়াকিল ইসলাম জানান, ৩ জন প্রভাষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এব্যাপারে পোরশা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি সেই সময়ে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম না এবং ডিসেম্বর মাসের পরে আমি এলপিআরএ যাবো। তাই কিছু বলতে পারছিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.