নেই কোনো সার্টিফিকেট তবুও তিনি দাঁতের চিকিৎসক

ফজলে রাব্বি হাসান, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : নওগাঁ সদর উপজেলার,হাঁসাইগাড়ি ইউনিয়ন এর কাটখইর বাজারে বেশ কয়েক বছর ধরে দাঁতের ডাক্তার সেজে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন মো: আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি হাঁসাইগাড়ি ইউনিয়ন এর হাঁসাইগাড়ি গ্রামের ছামছুর রহমানের ছেলে।

প্রায় সাত বছর ধরে উপজেলার কাটখইর বাজারে ‌‌”সেবা ডেন্টাল কেয়ার ” নামে কাটখইর বাজারে প্রতিষ্ঠান দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছেন তিনি। অথচ নেই কোনো চিকিৎসা সনদ, এমনকি নেই মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল, বিএমডিসির নিবন্ধন অথচ নামের আগে ডা: পদবী ব্যবহার করেন তিনি। প্রতিদিন না জেনে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আসছেন দাঁতের চিকিৎসা নিতে এতে ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দাঁতের ফিলিং, স্কেলিং, লাইট কিউর, ফিলিং ক্যাপ, দাঁত ওঠানো, দাঁত বাঁধানোর সব কাজই করা হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠানে এমনকি নামের আগে ডা: লেখা সিল ব্যবহার করে সাদা প্যাডে প্রেসক্রিপশন লিখেও দিচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন কাজে রোগীদের কাছ থেকে পাঁচশত টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে সে,এসএসসি পাশ বলে দাবি করলেও তবে সেটির সনদপত্রও দেখাতে পারেননি তিনি।

দাঁতের সব রকম চিকিৎসা চলে ভূয়া দাঁতের ডাক্তার আবু বক্কর সিদ্দিক এর গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানে। আবার দেখা যায় কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই দাঁতের নানারকম ঔষধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিচ্ছেন তিনি। দিচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন আবার কখনো করছেন ঝুকিপূর্ণ দাঁতের সার্জারি, এতে রোগীদের প্রাণ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি বলেন,তার বড় ভাই এর সাথে তাকে প্রায়-ই দেখতাম তাকে হঠাৎ করে কয়েক বছর আগে বিদেশ চলে যান তার বড় ভাই এরপর সে প্রতিষ্ঠান খুলে কোনো সার্টিফিকেট ছাড়াই নামের আগে ডা: বসিয়ে দাঁতের চিকিৎসা দিচ্ছেন এতে সাধারণ মানুষ না বুঝে ঝুকিতে আছেন। আমি সহ এলাকার সকল মানুষ তার কঠিন বিচার দাবি করছি।

এলাকার আরেকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাটবারে সকাল থেকে রাত অব্ধি নানা বয়সের মানুষ তার নিকট ভীড় করে দাঁতের চিকিৎসকা নেয়ার জন্য। শুনেছি হঠাৎ করেই সে নামের আগে ডা. পদবী ব্যবহার করে নিজেকে জাহির করেন। তিনি আরো বলেন, হঠাৎ করে ডাক্তার বনে যাওয়া দেখে আমরাও অবাক হয়েছি তবে জানতাম না তার কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, আমাদের এলাকাবাসীর দাবি তার বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষকে তার হাত থেকে রক্ষা করা।

ভূয়া দাঁতের ডাক্তার, আবু বক্কর সিদ্দিক নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, আমি কোনো দাঁতের চিকিৎসক না, আমার কোনো সার্টিফিকেট নেই নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিস থেকেও নিবন্ধন নেই আমার তবে আমরাই একটা সংগঠন বানাতে চেয়েছিলাম। বড় ভাই এর কাছ থেকে শিখেছে,তিনি বিদেশ চলে যাওয়ার পড়ে আমি প্রতিষ্ঠান দিয়েছি ,আমি কোনো দাঁতের ডাক্তার নয়।

এ বিষয়ে হাঁসাইগাড়ি ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান জানান, সে প্রায় অনেক বছর ধরে ডাক্তারি করে, কি যেন সার্টিফিকেট আছে RMP, মনে হয়, তার চিকিৎসা ভালোই।

সার্টিফিকেট ছাড়া কিভাবে ডাক্তার হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,সাটিফিকেট লাগবে ঠিক আছে তবে তার চিকিৎসা ভালো। ইউএনও মহোদয় আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে আমি তার সার্টিফিকেট টা দেখবো এখন। ডেন্টালে আমি দেখি অনেক মানুষ তার কাছে ভিড় করে তবে ভুল চিকিৎসার জন্য যদি ক্ষতি হয় এটাও বিষয়। ইউএনও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মুনির আলী আনন্দ মুঠোফোনে বলেন, এমবিবিএস ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না,গ্রাম্য চিকিৎসক হয়ে থাকলে গ্রাম্য চিকিৎসক লিখতে পারে সেটা আইনে বলায় আছে। ভূয়া ডাক্তার হলে আমরা তো কিছু করতে পারবো না আমরা কোর্টে পাঠাতে পারবো। সেটা কোর্টের ব্যাপার। সে যদি ভূয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে হবে।#

Leave a Reply

Your email address will not be published.