বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর বদলগাছীতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে মাধ্যমিক ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যায়ে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক মন্ডলীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বিচারক মণ্ডলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক প্রতিযোগির অভিভাবক।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে গত ২৯ এপ্রিল সোমবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের তৃতীয় তলার একটি হল রুমে সঙ্গীত , নৃত্য, কবিতা আবৃতি , হামদ, নাত ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্টিত হয়। উক্ত প্রতিযোগিতায় সঙ্গীত ও নৃত্য শাখায় বিচারক মন্ডলীর দায়িত্ব পালন করেন বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. ফালগুনি চক্রবর্তী ও গোবরচাপাহাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক অসিম কুমার নন্দী। সঙ্গীত বিষয়ে ৭ টি ক্যাটাগরিতে দেশ্বাত্ববোধক, নজরুল সঙ্গীত, রবিন্দ্র সঙ্গীত, লোক সঙ্গীত , উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও জারি গান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতায় জারিগানে কোন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেনি।অন্য নব ক্যাটাগরিতে ক,খ,গ ও ঘ শাখায় শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করে । সেখানে খ শাখায় লোক সঙ্গীত বিভাগে অংশ গ্রহন করেন ৪ জন প্রতিযোগি শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতায় বদলগাছী সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩ টি ক্যাটাগরিতে অংশ গ্রহন করেন সিজান সিদ্দিকী। সিজান সিদ্দিকী খ শাখা হতে দেশাত্ববোদক ও রবিন্দ্র সঙ্গীত ২টি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করে। আর লোক সঙ্গীতে অপর ৩ জন প্রতিযোগি শিক্ষার্থীদের চাইতে নিজ হাতে হারমোনিয়াম বাজিয়ে অত্যন্ত সুন্দর গান পরিবেশন করলে ও আগে দুই ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করায় লোক সঙ্গীতে তার কোন স্থান নির্বাচন করেননি দুই বিচারক।
সিজান সিদ্দিকী ২ টি ক্যাটাগরিতর প্রথম স্থান অর্জন করেছে, তাকে ৩ ক্যাটাগরিতে লোক সঙ্গীতে প্রথম স্থান ইচ্ছে করে পক্ষ্যপাত মুলক দুই বিচারক মন্ডলী ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক কর্মকর্তা অনিল কুন্ড আলোচনা করে সিজান সিদ্দিকীকে প্রথম স্থান না দিয়ে লিখন নামে এক প্রতিযোগিকে প্রথম করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সিজানের বাবা আবু সাইদ সহ উপস্থিত কয়েক জন শিক্ষক বিচারক মন্ডলীর এমন পক্ষপাত মুলক বিচারের অভিযোগ তুলে তাৎক্ষনিক ভাবে এর সুবিচার দাবী করে মৌখিক অভিযোগ ও করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম ও একাডেমিক কর্মকর্তা অনিল কুন্ডুর কাছে। কিন্তু মৌখিক অভিযোগে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় সিজান এর অভিভাবক আবু সাইদ ৩০শে এপ্রিল নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এবিষয়ে অভিযোগকারী আবু সাইদ জানান, লোক সঙ্গীত প্রথম স্থান দেখানো প্রতিযোগি লিখন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেননি । সঙ্গীত নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিযোগিকে হারমোনিয়াম নিজে বাজিয়ে গান না করলে তার প্রাপ্ত মার্কস থেকে ৫ মার্কস কাটা পরবে। তার পর ও লিখনকে প্রথম করায় সিজান নামের প্রতিযোগির অভিভাবক হিসেবে ঐ বিচারকমন্ডলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই বিচারক মন্ডলীর মধ্যে ড.ফাল্গুনী চক্রবর্তীর বিচারিক ক্ষমতা বা বিচারকের দায়িত্বে বসানো মোটেই ঠিক হয়নি। কারন ড.ফাল্গুনী অধ্যাপক হলে ও সঙ্গীত বিষয়ে তার কোন একাডেমিক ও বাস্তব কোন অভিজ্ঞতা নেই। কারন তিনি কোন গানের শিল্পী বা শিক্ষক ও নয়। এমন ব্যাক্তিকে বিচারক মন্ডলীতে রাখা ঠিক হয়নি বলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক সাংবাদিক ও এক কলেজের অধ্যক্ষ মন্তব্য করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে উপস্থিত এক ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জানান, অধ্যাপক ড. ফালগুনী ম্যাডাম ইতি পূর্বে ও এক সঙ্গীত প্রতিযেগিতায় বিচারক হিসেবে পক্ষপাত মুলক আচারণ করেছেন। তিনি আর ও জানান,ড, ফালগুনীর এমন পক্ষপাত মুলক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচার করার কারনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গীতে মননিবেশ কমে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক কর্মকর্তা অনিল কুন্ড জানান, অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে আমি ছিলাম। কিন্তু বিচারক মন্ডলীরা আমার সাথে কোন পরামর্শ না করেই রেজাল্ট আমার হতে তুলে দিয়ে চলে গেছেন। এখন তারা ন্যায় বিচার করেছে না অবিচার করেছে আমি কিছু বলতে পারবো না। তারা দুজনেই যেহেতু দুই বিচারক মন্ডলী দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের এখন করার কিছুই নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিচারকের কাজ বিচারক করেছে। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।
উক্ত অনুষ্টানের বিচারক মন্ডলীর সদস্য অসিম কুমার নন্দীর সাথে কথা হলে সে জানায় , সিজান লোক সঙ্গীতে ন্যায় বিচার পায়নি এমন প্রশ্নে আমি বিবৃত বোধ করছি।
অপর বিচারক ড,ফাল্গুনী চক্রবর্তীর সাথে কথা হলে সে জানায়, প্রকৃত সঙ্গীত নীতামালায় যা রয়েছে সেটা ফলো না করে এখানে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষা কমিটি যে ভাবে পরামর্শ দিয়েছে সে ভাবেই বিচারকের দায়িত্ব পালন করা হয়েছে। তবে এখানে বিচারকের প্যানেলে ৩ জনের নাম ছিল। তার মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক কর্মকর্তার অনিল কুমার কুন্ডু উপস্থিত থাকলে ও তিনি দায়িত্ব পালন করেননি। ২ জন মিলে কোন বিচার করা সম্ভব হয় না। ৩ জন হলে বিচার কার্য সঠিক হয়। তবে ভুলের উদ্ধে কেহ নেই।
প্রতিযোগি শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা বিষয় টি মেনে না নিয়ে খ শাখা লোক সঙ্গীতের উপর বিশেষ ব্যবস্থায় পুরায় প্রথম স্থান যে প্রতিযোগিকে ঘোষনা করা হয়েছে এবং অপর প্রতিযোগি সিজান সিদ্দিকীর মধ্যে পুনরায় প্রতিযোগিতার আয়োজন করার মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ মাধ্যমিক উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।