পটুয়াখালীর দশমিনা জোয়ারের পানি শ্রেণিকক্ষে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

মোঃ যুবরাজ মৃধা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ইউনিয়নের উত্তর চর বোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ বর্ষা মৌসুমে জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায়।

প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে বিদ্যালয়ের ঘরে জোয়ারের পানি ঢোকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পানির মধ্যে পাঠদান করা হয়। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অথচ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ইউনিয়নে। এর নাম উত্তর চর বোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্থলভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ইউনিয়নে ওই বিদ্যালয়। বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষার মৌসুমে জোয়ারে কোথাও কোমর, কোথাও হাঁটুপানি থাকে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওই পানির মধ্য দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি নিচু হওয়ায় শ্রেণিকক্ষও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উত্তর চর বোরহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০৫ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ১৩০ জন। শিক্ষক আছেন ৪ জন। এলজিইডি দশমিনা উপজেলা কার্যালয় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের আওতায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জানুয়ারি মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। জুনে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার নানা অজুহাতে কাজ শেষ করতে পারেননি।

ওই চরের আবদুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। সুমাইয়া বলে, বৃহস্পতিবার স্কুলে আসার পর দুপুরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাদের বিদ্যালয়ের টিনের ঘর। শ্রেণিকক্ষের পানি ঢুকেছে। এতে তাদের জামাকাপড় ভিজে গেছে। আবার একই কক্ষে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায় তাদের সমস্যা হচ্ছে। অথচ সামনে তাদের সমাপনী পরীক্ষা।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইভামনি বলে, স্কুলে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ার পর বেঞ্চে পা উঠিয়ে বসে পড়তে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়। পাকা ভবন নির্মাণ হলে কষ্ট কমবে।

অভিভাবক আবদুর রহমান জানান, চরে আর কোনো বিদ্যালয় নেই। তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা চরে এটিই একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঠিকাদার দ্রুত ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করলে শিশুদের দুর্ভোগ কমবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোহাগ হোসেন জানান, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর বর্ষায় জোয়ারের পানিতে ভিজে আর গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পায়। অনেক আবেদনের পর স্কুল ভবন বরাদ্দ পাই। জানুয়ারি মাসে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। মাটির নিচের বেজ (ভিত) ওঠার পর কাজ বন্ধ রয়েছে। দুই মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির ১৮ শিক্ষার্থীর সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে নানা সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার পঞ্চম আলী বলেন, আসলে বালু পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ভরাটের কাজ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এই বর্ষার মৌসুমে নদী উত্তাল থাকায় মালামাল চরে পাঠানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘স্কুলভবনটি নির্মাণের ব্যাপারে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হবে। আমরাও চাই স্কুল ভবনটি দ্রুত নির্মাণ হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.