বগুড়া জেলা প্রতিনিধি সিফাত আল বখতিয়ার : বগুড়ায় দুর্বৃত্তদের হামলায় একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার ওরফে টোকাই সাগরসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। সাগর ছিলেন বগুড়া সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।
রবিবার সন্ধ্যা পৌণে ৭ টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের শাবরুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তারা মোটর সাইকেল যোগে যাওয়ার পথে দূর্বৃত্তরা পথরোধ করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
সাগরের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ হাফ ডজন মামলা রয়েছে। সে শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল হাটখোলা পাড়ার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। তার সহযোগী স্বপন একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, বগুড়া সদর সার্কেলের (পদোন্নতি প্রাপ্ত) পুলিশ সুপার এবং সদর থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেন শাজাহানপুর থানার এসআই ফারুক আহম্মেদ।
তিনি বলেন, সাগর ছিলো প্রশাসনের তালিকা ভুক্ত আসামি। সে কিছু দিন আগেও এক প্রফেসর কে হাত-পা কেটে হত্যা করেছে। সে হত্যা মামলায় জেল থেকে মাস খানেক আগে বের হয়েছে। সেই সাথে তার বিষেশ সহযোগি ছিলো নিহত স্বপন। এটি আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে তাদের দুজনকেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামিদের সনাক্ত করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এলাকাবাসী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তিনি বলেন, এলাকায় আওয়ামী লীগের এই দুই গ্রুপের শত্রুতা অনেক দিন ধরে চলছে। বালু ও মাদক ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন কারণে তাদের বিরোধ চলছিলো। এর আগেও তাদের বেশ কিছু পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছে। আজ সাগর এবং তার সহযোগী স্বপনকে একা পেয়ে পথরোধ করে মাথায় দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ছোট শাহীন ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
নিহত সাগরের নামে হত্যাসহ ১৭টিরও অধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার।
সাগর তালুকদার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২৫/৩০জন সদস্য নিয়ে গঠন করে সন্ত্রাসী বাহিনী। যা সাগর বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের সুদীর্ঘ ১৫ বছর সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে। কেউ চাঁদা না দিলে মারপিট এমনকি হত্যা পর্যন্ত করেছে। সাগরের নামে থানায় ৩টি হত্যাসহ ১৭টিরও বেশি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসে সাগর তালুকদার। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেমে ছিল না। এলাকার পূর্বের ন্যায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ট ছিল।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সন্ধ্যার পর সাগর,স্বপন ও মুক্তার একটি মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামের রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাদেরকে এলোপাথারী কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তায় ডোবার পাশে সাগরের মরদেহ এবং গফুরের বাড়ির উঠানে স্বপনের মরদেহ পড়ে আছে। রাস্তায় আরো একটি হাতের কব্জি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের ধারণা সাগরের সাথে থাকা মুক্তার নামের ওই যুবকের হাতের কব্জি হতে পারে। তবে ওই যুবক কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা এখনও জানা যায়নি।
নিহত সাগরের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, বিকালে পুকুরে চাষের মাছ দেখার জন্য গিয়েছিল সাগর। ফেরার পথে কে বা কারা আমার ছেলেসহ দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের সাথে কয়েকজনের শত্রুতা ছিল। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, নিহত সাগর এই এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে ১৭টিরও অধিক মামলা ছিল। যেহেতু সাগরের নামে একাধিক মামলা ছিল তাই আমরা ধারণা করছি পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা সাগর ও তার সহযোগী স্বপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশের একাধিক টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।