বাংলাদেশে আর্থিক খাতের সংস্কার শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

হাকিকুল ইসলাম খোকন, প্রতিনিধি আমেরিকাঃ  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফাইন্যান্স (বিআইআইএফ) কর্তৃক ‘ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর রিফর্মস ইন পোস্ট-শেখ হাসিনা বাংলাদেশ: কনটেক্সট এন্ড র‌্যাশনাল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি বিআইআইএফ এর কনফারেন্স হলে গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও বিআইআইএফ’র ফেলো অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক এবং অধিবেশনটির সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএফ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বিআইআইটি এর মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। কারণ আওয়ামী লীগের শেষ শাসনামল থেকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে গভীর কাঠামোগত ক্ষত দেখা দিয়েছে। অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও পদ্ধতিগত দুর্নীতি কেবল দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করেনি বরং পুঁজিবাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে এবং বীমা খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে তা আর্থিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা আনয়ন, আর্থিক খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য খুবই অর্থপূর্ণ।

তিনি বলেন, আর্থিক খাত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর। তাই বিনিয়োগে অকার্যকরতা দূর করতে হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে বেকারদের কর্মক্ষম জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে- যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ব্যাংকিং, পুঁজিবাজার ও বীমা খাতে প্রতিটির নিজস্ব চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রাধিকার প্রস্তাব রয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সংকটের সমাধান এবং দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত দুর্বলতা উভয়কেই বিবেচনা করতে হবে। জরুরি সংকট মোকাবেলা ও অবনতি রোধ করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেয়াকে তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার, ১-৩ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে পারে এমন কাঠামোগত পরিবর্তনকে স্বল্পমেয়াদী অগ্রাধিকার এবং টেকসই আর্থিক খাতের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৌশলগত সংস্কার ও স্থিতিশীলতা তৈরিকে দীর্ঘমেয়াদী অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিন ধাপে সংস্কারগুলিকে সুসম্পন্ন করলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

তিনি আরো বলেন, জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থকে সত্যিকার অর্থে এবং টেকসইভাবে সুরক্ষা ও নিশ্চিত করার জন্য সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর ভিত্তি করে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। পদ্ধতিগত সংস্কার ছাড়া কার্যকর ও সুস্থ আর্থিক খাত অসম্ভব। জুলাই/আগস্ট ২০২৪-এর আগে বাংলাদেশে যে ধরণের পদ্ধতিগত ধ্বংস এবং লুটপাট দেখা গেছে তা বিশ্বে খুব কমই দেখা গেছে। দেশের আর্থিক খাতের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা, ব্যাংকিং ও বীমা শিল্পে স্থিতিশীল পরিচালনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কারের জোর দাবি জানান তিনি।

বিআইআইএফ এর একাডেমিক সমন্বয়কারী ড. কে এম জাকির হোসেন সেলিম এর সঞ্চালনায় বৈঠকটিতে ব্যাংকিং খাতে ৭টি, ক্যাপিটাল মার্কেট সংক্রান্ত ৫টি, বীমা খাতের ৮টি এবং সার্বিক আর্থিক খাতের জন্য ৫টি তথা মোট ২৫টি সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি এবং সমস্যার সমাধানের উপায়-পদ্ধতি বা সংস্কার কৌশল উপস্থাপন করা হয়। আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ২৫টি প্রস্তাবনা গৃহীত হয় এবং শীগ্রই সুপারিশমালা নীতি-নির্ধারকেদের কাছে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আলোচনায় আরো অংশ নেন ড. মহব্বত হোসেন, ড. মাহফুজুর রহমান, ড. এ ওয়াই এম নেছার উদ্দিন, ড. সৈয়দ সাখাওয়াতুল ইসলাম,আতিকুর রহমান খাদেম, মির্জা ওয়ালি উল্লাহ এবং মো. লোকমান হোসেন প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.