বাউফলে বৃষ্টি না হওয়াতে আমন চাষিরা হতাশ!

সানাউল হক (বাউফলপটুয়াখালী): পটুয়াখালী জেলার বাউফল এ বৃষ্টি না হওয়াতে ফসলের মাঠ ফাটল। কথায় আছে বৃষ্টির পানিতে কপাল না ভিজলে, কুয়াশার পানিতে কখনো কপাল ভিজে না। এই কথাটি অনেকটা মিলে গেছে বর্তমান পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কৃষকদের সাথে। বাউফল পৌরসভাসহ দশটি ইউনিয়নের কৃষকরা আকাশ পানে চেয়ে আছে কখন বৃষ্টি হবে, কখন আমনের চারা রোপণ করবেন। আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র মাস এই সময় বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল থৈ থৈ করে। আমন ধান রোপণের ভরা মৌসুম।

বর্ষা মৌসুমেও দেখা নেই বৃষ্টির। জমিতে পানি না থাকায় আমন ধান লাগাতে পারছেন না কৃষকরা। এক দিকে পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে বীজতলা শুকিয়ে ধানের চারা মরে যাচ্ছে। এই মৌসুমে ধানের চাষ সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাউফলের  কৃষকেরা। আমন ধান রোপন শুরু হয় শ্রাবণ মাসে। বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করেছে।

উপজেলা কালিশুরী  ইউনিয়নের কৃষক দুলাল বলেন, ‘আমন ধানের চাষ পুরোটাই বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এক দিকে পানির অভাবে জমি প্রস্তুত করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে পানির অভাবে বীজতলা শুকিয়ে ধানের চারা মরে যাচ্ছে। তাই সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করার জন্য জমিতে পানি দিচ্ছি ‘

তিনি বলেন, ‘সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করে লাভের আশা করা যায় না। ডিজেলের দাম অনেক বেশি প্রতি ঘণ্টা ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে সেচ যন্ত্রের মালিকরা।’

তিনি আরো বলেন, অন্য বছর এ সময় জমিতে আমন ধান লাগানো প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর কিছুই করতে পারলাম না।

সরজমিন বাউফল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জমি শুকিয়ে গেছে। খাল বিল ও নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ফসলের

জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে ফসলের জমি। পানির কারণে কৃষকের আমন ধান রোপণের সময় বিলম্ব হওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ পাম্প দিয়ে আমন ধান রোপনের চেষ্টা করছেন। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কৃষক সমাজ। বৃষ্টি না হলে ধান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না আমন চাষিরা।

 ‘এই সময় মাঠ-ঘাট বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর করে। কৃষক আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু এবছর তেমন বৃষ্টিপাত নেই। প্রচণ্ড তাপদাহ, তীব্র খরা, আর অনাবৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ তেমনিভাবে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলের চাষাবাদ। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখছেন। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে ধানের চারা রোপন করতে না পারলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জমির আশেপাশে পুকুর বা ডোবা থাকলে সেখান থেকে সেচ দিয়ে ধান রোপন করার চেষ্টা করছে চাষিরা। ধান চাষী এরশাদ উল্লাহ, ইয়াকুব আলী, আবুল মনসুর কালের সংবাদ পত্রিকার  সাংবাদিকদের জানান, আমরা বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি দিয়ে আমন ধান চাষ করতাম, কিন্তু এই বছর বৃষ্টি না হওয়াতে সেচের পানি দিয়ে আমনের চারা রোপন করার চেষ্টা করছি, যদিও সেটা অনেক ব্যয়বহ।’

আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘এখন ভরা বৃষ্টির মৌসুম কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের মতে, একটু একটু বৃষ্টি হবে তাও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সাগরের লঘু চাপ সৃষ্টি না হলে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই কম। এ অবস্থায় উপজেলার আমন চাষিরা ধান চাষের আশা করতে পারছেন না। এর ফলে আমন চাষিদের চোখে মুখে এখন অন্ধকার ও হতাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.