বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট সাঙ্গু নদীর পানিতে চলে জীবন

শৈহ্লাচিং মার্মা, রুমা প্রতিনিধি (বান্দরবান): বাড়ির সামনে বয়ে গেছে নদী। তারপরও বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট।  তাই নিজেরাও সব কাজে অনিরাপদ নদীর পানি ব্যবহার করি। আর বাড়িতে মেহমান আসলে, এই  পানি-ই পান করাচ্ছি। এভাবে চলছে – প্রায় চার মাস। এসব কথা বলেছেন মেঞোচিং মার্মা (৪১) ও চিংমে মার্মা (৫৮)।
গত সোমবার (১১ মার্চ )এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে রিঝুক পাড়ার একটি ছোট্ট চা-দোকানে বসে খোলামেলা কথা হয়- এই দুই নারী সঙ্গে। ওই সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পাড়া প্রধান সহ নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজন দোকানে বসে চা পান করে আড্ডা দিচ্ছিলেন তারা।
টেবিলে প্লাস্টিক জগ আর সেভেন-আপ বোতলে স্বচ্ছ পানি। পানি নিরাপদ কিনা, জানতে চাইলে দোকানে থাকা সাথোয়াইচিং (৩৫) আঙুল দেখিয়ে বলেন, পানি এই সাঙ্গু নদী থেকে তোলা। নিরাপদ ও অনিরাপদ জানিনা,  আমরা সবাই নদীর পানি খায়। চা-দোকানের যাবতীয় কাজ এ পানি দিয়ে সাড়িয়ে নিতে হয়। আর কোনো উপায় নেই।
পাড়াবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাড়াটি প্রতিষ্ঠার বয়স প্রায় ৩০ বছর। ৩৮ পরিবারের শিশু কিশোর নারী-পুরুষ এ পাড়ায় বসবাস করছেন।
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অবস্থিত এই রিঝুক পাড়াটি। রুমার অন্যতম পর্যটন স্পট রিজুক ঝরনা”টি এ পাড়ার বিপরীতে অবস্থিত।  পর্যটন স্পট রিঝুক ঝরনার কারণে রিঝুক পাড়াটিও পর্যটকের কাছে বেশ পরিচিত।
হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্বাচ্ছন্দ্যবোধে চা পান করতে করতে মেঞোচিং মার্মা বলেন, আমাদের মাচাং ঘরের ধারে হয়ে বয়ে যায়- সাঙ্গু নদীর পানি। নারীরা এখন এই পানি ব্যবহার করছেন -রান্না মুছা সহ সব কাজে। শুধু ঘরে না। কোনো অতিথি আসলেও নিরাপদ পানি বলতে সাঙ্গু নদী পানির বিকল্প নেই।
পাড়ার পাশে যে ঝরনা থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সংগ্রহ করা যেত, তাও প্রতিবছর ডিসেম্বর শুরু হতে না-হতেই পানি শুকিয়ে যায়,।‌ ফোঁটা ফোঁটা পড়া এক কলসি পানি ভরাতে কমপক্ষে তিন-চার ঘন্টা লাগে। এই পানীয় জলের সংকটের ভোগান্তি  কাকে বোঝাবো, এই প্রশ্ন করেন চিং মে প্রু। তিনি বলেন, এখন আমাদের নারীদের পানি সংগ্রহের একমাত্র উৎস সাঙ্গু নদী। পানি তুলতে নেমে উপর থেকে মল ভেসে আসতেও চোখ পড়ে।
বিঝুক পাড়া কারবারী প্রুসানু মার্মা জানান, ১০ থেকে ১২ বছর  আগে রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদদ  জিএফএস পাইপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ঝরনা থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তিন বছর আগে প্রবল বর্ষণে পাইপ লাইনটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে নষ্ট হয়ে যায় । তখন থেকে বন্ধ হয়ে যায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ।
পাড়ার বাসিন্দা চসিংঅং মার্মা বলেন, কোন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা পেলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা সম্ভব। কারণ পাড়ার পার্শ্ববর্তী থেকে পাইপ লাইন দিয়ে পানি আনা সম্ভব।
স্থানীয় মেম্বার চাইশৈহ্লা মার্মা বলেন এই রিঝুক পাড়ায় জি এফ এস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ করার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা আছে। চলতি জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *