ভাঙ্গুড়ায় এজেন্ট ব্যাংকের স্ট্যাম্প জালিয়াতি, তদন্ত করছে ইসলামী ব্যাংক

সিরাজুল ইসলাম আপন, ক্রাইম রিপোর্টার (পাবনা): পাবনার ভাঙ্গুড়া ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে। মেসার্স সাথী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এই আউটলেট এর মালিক। তিনি তিন বছরের বেশি সময় ধরে জাল স্ট্যাম্প ব্যবহার করার মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। এই ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে আউটলেটটিতে। গত ছয় মাসে পাঁচবার তদন্ত করেছে ইসলামী ব্যাংকের (তদারকি শাখা) চাটমোহর শাখা।

জানা যায়, পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার শরৎনগর বাজারের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম। তিনি কয়েক বছর ধরে বাড়ির পাশের ইসলামী ব্যাংকের আউটলেটে বিদ্যুৎ বিল জমা করেন। প্রতিটি বিল এক থেকে দুই হাজার টাকার হওয়ার কারণে ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়। কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ বিলে ব্যবহৃত হওয়া এসব স্ট্যাম্প তার কাছে জাল বলে মনে হয়। পরে তিনি কয়েকটি বিদ্যুৎ বিল স্থানীয় ব্যাংকে যাচাই করলে জাল স্ট্যাম্প ধরা পড়ে। এই আউটলেটে জমা হওয়া কয়েকটি বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করে স্থানীয় একাধিক ব্যাংকে ফেক মেশিনে যাচাই করলে জাল ধরা পড়ে। এই আউটলেটে প্রতিদিন করে ৫০ টি বিদ্যুৎ বিল জমা হয়। এতে মাসিক ১৫ হাজার টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে।

আরো জানা যায়, আউটলেটে গ্রাহকদের একাউন্ট খোলার সময় রফিকুল নিজের বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার ও মোবাইল নম্বর যুক্ত করেন। পরে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তার বিরুদ্ধে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকা গ্রাহকদের দিতে নানা রকমের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে পাবনার চাটমোহর ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম সিদ্দিকী।

এ ব্যাপারে চাটমোহর ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আবুল কালাম সিদ্দিকী বলেন, এই আউটলেট এর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ওঠায় গত ছয় মাসে অন্তত পাঁচবার ওডিট করা হয়েছে। স্ট্যাম্প জালিয়াতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন ভাঙ্গুড়া এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েতে পারেন। তবে সকল বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা অব্যাহতভাবে অডিট করে যাচ্ছি।

আউটলেটের গ্রাহক আমিরুল ইসলাম সহ কয়েকজন অভিযোগ বলেন, বিল জমা করার সময় স্ট্যাম্প আঠা দিয়ে লাগানো হতো। এসব বিল বাড়িতে জমা রাখা হতো। পরবর্তীতে দেখা যায় বিলের স্টাম্পের রং পরিবর্তন হয়েছে। এতে সন্দেহ হলে স্ট্যাম্প ব্যাংকে নিয়ে যাচাই করলে জাল ধরা পড়ে। ইসলামী ব্যাংককে আমরা একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেবে আসছিলাম এতো দিন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিলে জাল স্ট্যাম্প ব্যবহার করায় চরম হতাশ হয়েছি। এখন শুনছি নানা রকমের অনিয়মেও জড়িয়ে পড়ছে এই আউটলেটের ইনচার্জ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠানে দুই টাকায় একটি জাল স্ট্যাম্প বিক্রর জন্য প্রস্তাব দেয়। এতে কিছু অসাধু ব্যক্তিরা জাল স্ট্যাম্প কিনে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে আউটলেটর স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে রেভিনিউ স্ট্যাম্প কেনা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে রেভিনিউ স্ট্যাম্প কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ভাঙ্গুড়া আউটলেট এর বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহে জাল স্ট্যাম্প ব্যবহার করলে ওই আউটলেটের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.