ভৌতিক ভাবে টাকা কেটে নেওয়া প্রিপেইড মিটার বাতিল এর দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন

আতাউর শাহ্, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) নওগাঁর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করা হলে ভৌতিক ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। 

এতে বাড়তি টাকা খরচ হওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তী বাড়ছে। আর তাদের ভোগান্তী থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধে রাস্তায় নেমে বানববন্ধন করেছে নওগাঁবাসী। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারী বেলা সাড়ে ১১ টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে তারা।

এসময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তি উৎপল সাহার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সমাজ তান্ত্রিক দল নওগাঁর সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আলীমুর রেজা রানা, সাবেক কাউন্সিলর এসএম রশিদুল আলম সাজু, বিন আলী পিন্টু, দেওয়ান কামরুল আহসান শাহীন, মধ্যদূর্গাপুর গ্রামের মোঃ সাইফুল ওয়াদুদ,শহিদুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক কমিটির সোহাগ সোহাগ সহ অন্যরা। মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এবং ভুক্তভোগী গ্রাহকসহ সুধিজনরা উপস্থিত ছিলেন।

নওগাঁ পৌরসভা এলাকায় গত একমাস থেকে বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে নেসকোর পক্ষ থেকে। এই মিটার স্থাপন করতে গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে গ্রাহকদের বাসায় মিটারটি লাগিয়ে দিচ্ছে নেসকোর পরিচয় দেয়া লোকজন। বিভিন্নভাবে জরিমানা করার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে ফলে গ্রাহকদের সঙ্গে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে মিটার লাগানোর পর বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। মিটারে টাকা রিচার্জ করা হলে ভৌতিক ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। যার কারণে প্রিপেইড এ মিটার স্থাপন বন্ধের দাবী জানিয়েছেন সচেতনমহল।

নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসীন্দা গ্রাহক মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে নেসকোর পরিচয় দিয়ে লোকজন এসে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়। ওইদিনই তারা ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু মিটারে বাস্তবে ২০ টাকা দেখা যায়। পরদিন সকালে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মিটারে দেখা যায় টাকা নাই। হাওলাদ করে মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ১৬০ টাকা কেটে নেয়। অথচ আর ১৫০ টাকা যোগ করা হলে আমার সারা মাসের বিল হয়ে যেতো। কারণ ডিজিটাল মিটারে আমার প্রতিমাসে বাসার বিদ্যুৎ বিল আসে ৩০০-৩৫০ টাকা। আমার কাছে প্রিপেইড মিটার সুবিধাজনক মনে হয়নি। এছাড়া তারা প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিয়ে ডিজিটাল মিটার অফিসে জমা দিতে নিষেধ করে যা নিয়ে আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়।

বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক আলীমুর রেজা রানা বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় জনগণকে উপেক্ষা করে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়। মানুষের দাবি উপেক্ষা করার কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আমরা চাইনা কেউ জনগণের দাবি উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার মতো পরিণত ভোগ করুক। ডিজিটাল মিটারও কিন্তু আধুনিক। এবং সেটা সরকারি। তাই সরকারি জিনিস বাদ দিয়ে বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে মিটার ব্যবহার করতে চাইনা। কারণ বেসরকারি কোম্পানি চাইবে সাধারণ জনগণের পকেট থেকে বেশি টাকা লুট করতে। যা লুটপাট করতে দিবে না নওগাঁবাসী। প্রযুক্তির কোনো দোষ নেই। কিন্তু প্রযুক্তি যে মানুষ চালাই, তার কারণে প্রযুক্তি কলঙ্কিত হয়। বিদ্যুৎ সবার জন্য। কিন্তু এই প্রিপেইড মিটার যার, টাকা আছে তার। অথচ মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে গেছে। এতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই অবিলম্বে বাসা-বাড়ি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রিপেইড মিটার লাগানো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি নেসকোর অফিস ঘেরাও করা হবে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তি উৎপল সাহা বলেন, বাড়িতে ঢুকে জোর করে নেসকোর পরিচয়ে আসা লোকজন মিটার পরির্বতন করছে। আবার তারা ইচ্ছেমতো বিল করে পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের অফিসের ঘুষ দুর্নীতি তদন্ত করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে। তারা ঠিক মতো সার্ভিস দিতে পারে না। মানুষ ওই প্রিপেইড মিটার লাগাতে চায়না। নেসকোর জুলুম শুরু হয়েছে তা প্রতিরোধ করতে হবে। যে মিটারটি লাগানো হয়েছে ইতোমধ্যে তা পরিবর্তন করে আগেরটা লাগিয়ে দিতে হবে। কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের দাবী আদায় করা হবে।

অপরদিকে ভোগান্তীর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) নওগাঁর বিক্রয় ও বিতরণ দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানজিমুল হক। তিনি মুঠোফোনে বলেন, জেলায় উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। কিন্তু প্রিপেইড মিটার আসছে তারও অধিক। ইতোমধ্যে তিন ফেজের মিটার লাগানো শেষ হয়েছ। দুই ফেজের মিটার লাগানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তবে গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে গ্রাহকরা ভোগান্তী বা হয়রানি যেন না হয়। এখানে ব্যক্তি স্বার্থ বা অনিয়মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নাই। একসময় এই প্রিপেইড মিটার সকলের প্রয়োজন হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *