শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এঁর ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহাকবি-র জন্মস্থান কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে ৭ দিনব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে মেলার মূল ফটকে ফিতা কেটে, বেলুন উড়িয়ে ও শান্তির পায়রা উড়িয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো: ফিরোজ সরকার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মধুমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড.খন্দোকার এহসানুল কবির, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহক, যশোর ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু, যশোর প্রাচ্যসংর্ঘের প্রতিষ্ঠাতা লেখক গবেষক বেনজীন খান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেশবপুর উপজেলার আমীর অধ্যাপক মোক্তার আলী ও যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জেসিনা মুর্শিদ প্রাপ্তি, কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফারজানা ইসলাম, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রফেসর মোঃ জিল্লুল বারী।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবছর সাগরদাঁড়ি সেজেছে বর্ণিল সাজে। মেলার শুরুর প্রথম দিনেই মহাকবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ, বুড়ো কাঠবাদাম তলা, বিদায় ঘাট, মধুপল্লীসহ মেলা প্রাঙ্গণে হাজার হাজার দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মধুমেলা প্রাঙ্গণ। মধুমেলায় এবছর দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে প্রতিদিনই মহাকবির স্মৃতিময় জীবনী নিয়ে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিকদের আলোচনা ও দেশবরেণ্য খ্যাতনামা শিল্পীদের গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্যান্ডেলে যাত্রাপালা, সার্কাস, জাদু প্রদর্শনী ও মৃত্যুকূপ রয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, শিশু বিনোদনসহ নানা আয়োজন। এছাড়াও রয়েছে কৃষি প্রযুক্তি মেলা এবং ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান স্বরণে জুলাই বিপ্লব কর্ণার।
সরজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, এবছর সাগরদাঁড়িতে জমকালো আয়োজন এবং এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ আয়োজক কর্তৃপক্ষ মধু মেলাকে সুন্দর ও স্বার্থক করার জন্য খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার ছুটির দিনে মধুমেলা শুরু হওয়ায় দর্শনার্থীদের সমাগম অনেকটা বেশি। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন দোকানপাট থেকে তাদের শিশু ছেলে মেয়েদের খেলনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছেন। সাগরদাঁড়িসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে মেলা দেখতে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করেছে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রশাসন ব্যাপক তৎপর রয়েছে।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন বলেন, সাগরদাঁড়িতে মধুমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদ্যাপনের লক্ষে মধুমঞ্চে প্রতিদিনই দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও খ্যাতনামা শিল্পীসহ কেশবপুর ও যশোরের বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মধু মঞ্চ প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে। মেলার প্রথম দিনেই দর্শনার্থীদের সমাগম অনেকটা বেশি। মধুমেলার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে কোন প্রকার জুয়া ও অশ্লীলতা পরিহার করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। মেলায় সুন্দর পরিবেশ পরিস্থিতি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসন ব্যাপক তৎপর রয়েছে। এছাড়াও গোটা মেলা প্রাঙ্গণ সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক নজরদারি জোরদার এবং সার্বক্ষনিক জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছে। আশাকরি সকলের সহযোগিতায় ঐতিহ্যবাহী মধুমেলা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।
আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, গোটা মধুমেলায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের ব্যাপক নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মধুমেলার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে কোন প্রকার জুয়া, অশ্লীলতা করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও মেলার মাঠে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধনের লক্ষে যদি কেউ কোন প্রকার নাশকতামূলক কর্মকান্ড করার চেষ্টা চালায় তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ঐতিহ্যবাহী যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
জমিদার পিতা রাজনারায়ন দত্ত এবং মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে মহাকবি আর্বিভূত হন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।