শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) : মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এঁর ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে মহাকবির জন্মস্থান যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে মধুমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এবছর মধুমেলা ঘিরে এলাকাবাসী ও মধুপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করেছে। শীত উপেক্ষা করে জমজমাট মধুমেলার শেষ দিনেও কবির স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ, বুড়ো কাঠবাদাম তলা, বিদায় ঘাট, মধুপল্লীসহ মেলা প্রাঙ্গণে লাখোলাখো দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে। গভীর রাত পর্যন্ত গোটা মেলার মাঠে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় ছিল।
যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত ২৪ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মধুমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার এর সভাপতিত্বে মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, যশোর জেলার পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, যশোর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, যশোরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক কাজী শওকত শাহী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেন্টাল প্রতিনিধি নুসরাত তাবাসসুম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার আহবায়ক রাশেদ খান, যুগ্ন আহবায়ক বি এম আকাশ, যুগ্ন সদস্য সচিব সাঈদ সান ও কেশবপুরের প্রতিনিধি সম্রাট হোসেন।
সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
মহাকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলায় এবছর দর্শনার্থী ও মধুপ্রেমীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে প্রতিদিনই মহাকবির স্মৃতিময় জীবনী নিয়ে দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিকদের আলোচনা ও খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনাসহ কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার পাশাপাশি সার্কাস, প্যান্ডেলে যাদু প্রদর্শনী, ভূতের বাড়ি ও মৃত্যুকূপ মুগ্ধ করে তোলে দর্শকদের। শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার মাঠে ছিল নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেন, নৌকাসহ নানা আয়োজন। মেলার মাঠে কুটির শিল্পসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন দোকানপাট থেকে তাদের শিশু ছেলেমেয়েদের খেলনাসহ সাংসারিক বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনেছেন। তবে, এবছর মধুমেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল কৃষি প্রযুক্তি মেলা। কৃষি মেলায় কৃষকদের আনা বিশাল আকৃতির মেটে আলু, বড় বড় মিষ্টি কুমড়া, মান কচু, স্কোয়াশ, হাজারী কলার কাঁদি, লাউ, মুলা, ওলকপি, রঙিন বাঁধাকপি, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, বারোমাসি কাঁঠাল, পেঁপেসহ শতাধিক কৃষি পণ্য দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া বিভিন্ন বীজ দিয়ে তৈরি উপজেলার মানচিত্রসহ ফসল উৎপাদনের দৃশ্য সব বয়সী মানুষ ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন। সেজন্য কৃষি মেলা মন কেড়েছে ছোটবড় সকল দর্শনার্থীদের। এছাড়াও ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান স্বরণে জুলাই বিপ্লব কর্ণারও দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দর্শনার্থীরা শ্রদ্ধার সাথে জুলাই বিপ্লব কর্ণারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও নিহতের আলোকচিত্র প্রদর্শনীগুলো ঘুরে ফিরে দেখেন। এছাড়াও জুলাই কর্ণারের পাশে দাড়িয়ে শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ ছবি তুলেছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) পোস্ট করেছেন। এছাড়াও মেলার মাঠে বসানো বাহারি আকারের মিষ্টির ভেতর বালিশ মিষ্টি, মটকা চা ও আগুন পান নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। মেলা ঘিরে সাগরদাঁড়িসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িতে মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ অতিথিদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করেছে।
মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন লাখোলাখো মধুভক্তসহ দর্শনার্থীরা এসেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায় ঐতিহ্যবাহী মধুমেলা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।