সাপাহারে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরগরম আমের হাট

তছলিম উদ্দীন, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহার বর্তমানে আমের রাজধানী হিসেবে বেশ সুপরিচিত বরেন্দ্র এই উপজেলার নাম। এই উপজেলার উৎপাদিত সুমিষ্ট আম বানিজ্যিক ভাবে দেশের গুন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। চলতি মৌসুমের শুরুতেই শীতের তীব্রতা এবং পরবর্তীতে প্রচন্ড তাপদাহের কবলে পড়ে আমের ফলন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে যার ফলে আমের উৎপাদন অনেকাংশে কম হয়েছে। এবার ২২ মে গুটি আম দিয়ে শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের আম সংগ্রহ এছাড়া ২৮ মে গোপালভোগ ,২ জুন খিরসাপাত/হিমসাগর,৭ জুন নাকফজলি এবং ১০ জুন থেকে শুরু হয়েছে ল্যাংড়া/হাঁড়িভাঙ্গা।

ইতোমধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরগরম হয়ে বসেছে আমের হাট। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে নওগাঁর সাপাহারে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত আম ব্যাবসায়ীগন অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও এসেছেন আম কিনতে। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আম সুমিষ্ট হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এই আমের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে হাটে ভ্যান, ট্রলি, পিকআপ সহ বিভিন্ন ভাবে আসা আমের বেচা- কেনা চলে এই হাটে। সাপাহার সদরের টেকনিক্যাল কলেজ থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩কিলোমিটার দীর্ঘ হয় এই আমের হাট। এবার সাপাহার সদরে ২০০টির অধিক আম আড়ৎ এ আমের বেচা-কেনা হচ্ছে বলে জানা গেছে । প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলোতে ৩থেকে ৫হাজার মন আম কেনা হচ্ছে,তবে চলতি মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের পর আমের রাজা আ¤্রপলি (রুপালী) আম বাজারে নামলে এই বেচা কেনা পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন আম ব্যাবসায়ীগন।

আম বিক্রেতা মুকুল হোসেন জানান, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি তিব্র খরার কারণে উৎপাদন কম হলেও শুরু থেকেই আমের দাম ভাল হওয়ার ফলে সকল খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে এবং লাভের পরিমাণ ও ভালো হবে তবে আমের ওজনের ক্ষেত্রে ৫১/৫২ কেজিতে মন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার দাবিও জানান ।

রিফাত ফল ভান্ডার এর মালিক রিফাত হোসেন জানান, এবার বাজারে কিছু দিন পরে আম আসলেও এখন আমদানি তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে ,আড়ৎ ঘরে বেপারীরা আম কিনছেন তবে কোরবানি ঈদের পর আমরূপালি আম বাজারে উঠবে এবং কেনা বেচা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

সাপাহার বাজার আমচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের বলেন এবার আমের উৎপাদন অনেকাংশে কম হয়েছে তবে শুরু থেকে আমের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষীরা। আমের ওজনের বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন আমাদের নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রশাসনিক ভাবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহŸানও জানান তিনি।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী এবার গুটি আম ২২ মে সংগ্রহ শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ ২৮মে, খিরসাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাগফজলি ৭ জুন, ল্যাংড়া/হাঁড়িভাঙা ১০ জুন, নাকফজলি ২০জুন, আম্রপালি ২২জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই সংগ্রহ করা হবে।

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সাপাহার সদর আম হাট ঘুরে দেখা গেছে, ল্যাংড়া আম ২২শ থেকে ২৮শ টাকা, নাকফজলি ২৩শ থেকে ২হাজার ৬৫০, খিরসাপাত ২৫শ ৩ হাজার ৫০০ শত টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৩৯ হাজার মেট্রিকটন নির্ধারণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.