মোঃ মোকাররম হোসাইন জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তালের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখির বাসা। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা অনেকটা বিলীন হতে চলেছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫-২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের ,তালগাছ,সুপারিসহ বিভিন্ন গাছে দেখা যেত এদের বাসা।
বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো। কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়,বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই,কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে….। কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী এ ছড়ায় বাবু পাখির প্রধান আস্তানা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ যেমন এখন আর দেখা যায় না।তেমনি দেখা মেলে না ছড়ার নায়ক বাবুই পাখিও।এক সময় গ্রাম – বাংলার মাঠ-ঘাট, তালগাছের পাতায় দশ ও বিশটা ঝুলন্ত বাবুই পাখির বাসা ছিল নিত্যসঙ্গী। আজ তা বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একটা সময় গ্রাম-বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা মাঠের পাশে দেখা মিলতো সারি সারি তালগাছের। সেখানে সাদা চঞ্চল নিষ্ঠাবান বুনন শিল্পী পাখির বাসাও কারো নজর এড়াতো না। সেই তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা দুটোই আজ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলা থেকে। তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক শিল্পীর পাখি ভোরবেলা কিচিরমিচির মধুর সুরে ডাকাডাকি আর উড়োউড়ি। গ্রামগঞ্জে, এমনকি শহরতলীতেও অনেক তালগাছ দেখা যেতো, সেসব তালগাছে ঝুলে থাকতো হাওয়ায় দোদুল্যমান বাবুই পাখির বাসা।শুধু তালগাছেই নয় বরং নারকেল, সুপারিসহ নানান দীর্ঘ বৃক্ষেই বাসা বাঁধে বাবুই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব গাছ কমে যাওয়ায় আবাসন নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে এই পাখি।
এবং বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালে ডালে নেচে বেড়ায়।
এ উপজেলার কৃষক সামছদ্দিন মন্ডল বলেন,ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোর মধ্যে অনেক বাবুই পাখির বাসা ছিল। কিন্তু এখন বাবুই পাখির বাসা আর দেখা যায় না। বাবুই পাখির বাসাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র কয়েকটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে।
হাতিয়র মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃমোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন এসব যেন বইয়ের ছড়া আর দাদুর কাছে শোনা গল্প। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা এবং বড় বড় তাল খেঁজুর, নারিকেল গাছ না থাকার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির কারিগর বাবুই পাখি।তাই বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শন রক্ষা করার জন্যে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মনিরুজ্জামান বলেন,বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে।অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে।অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।তিনি আরও বলেন, ফসলে অতিরিক্তি কীটনাশক ব্যবহার, নির্বিচারে পাখি হত্যা, প্রাচীন বৃক্ষ নিধন ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না পাখির। তাই দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে পাখি।