হিমাগারের ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০ টাকায়, ভোক্তাদের ওপর চাপের শঙ্কা

মোঃ মোকাররম হোসাইন কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটে কালাইয়ে চলতি মৌসুমে আলু সংরক্ষণের খরচ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে হিমাগার মালিকরা।আলু সংরক্ষণের জন্য ভাড়া প্রতিকেজিতে এক টাকা বাড়িয়ে আট টাকা করে নির্ধারণ করা হয়েছে।আগে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণে ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা।এবার তা কেজিতে এক টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০০ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাবার আলু ও বীজ আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তা এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এদিকে বিদ্যুতের দাম না বাড়ার পরও প্রতি কেজি আলুতে সংরক্ষণ চার্জ এক টাকা বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, শ্রমিক ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এই নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
কালাই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজ এর মালিক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানান,চলমান পরিস্থিতিতে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমাগার মালিকদের সভায় চলতি বছরে প্রতিকেজি আলুর ভাড়া ১ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি।তবে এখনও এ-সংক্রান্ত কোনো অফিসিয়াল নির্দেশনা পাইনি।
জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবছর জয়পুরহাটে ৪৩,৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।এই মৌসুমে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।এরমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ আলু জেলার ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। ২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু রাখেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। এই মজুদ করা আলু সারা বছর বাজারে বিক্রি করা হয়।
হিমাগারগুলোতে ফেব্রুয়ারি-মার্চে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে এবং জুন থেকে এই মজুত বাজারে ছাড়া হবে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের ভাড়া ছিল ৭ টাকা। এবারে এই ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করায় মৌসুম শেষে আলুর দামে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম অভিযোগ করেছেন, হিমাগার মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে চলেছেন।এর প্রভাব ভোক্তার ওপরই পড়বে। তিনি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কালাই পৌরসভার বাসিন্দা বিশিষ্ট আলু ব্যবসায়ী মোঃ আইজুল হোসেন বলেন, হিমাগার মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং সাধারণ কৃষক ও ভোক্তাদের প্রতি অন্যায়।তারা গত বছরও জোটবদ্ধ হয়ে ভাড়া বাড়িয়েছে, এবারও একই কাজ করছে।বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, তবুও খরচ বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এর প্রভাব বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, হিমাগারের ভাড়া বাড়ার কারণে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে আলুর দাম বাড়াবেন।বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, তারপরও এই খরচ বৃদ্ধি অযৌক্তিক। যদি প্রকৃত কৃষকদের জন্য ভাড়ার ছাড় দেওয়া হয় এবং বীজ আলু সংরক্ষণে উৎসাহিত করা হয়,তবে সংকট কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.