একজন মানুষের লোভের আগুনে বাংলাদেশ জ্বলে-পুড়ে ছাড়খার: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনা

হাকিকুল ইসলাম খোকন, প্রতিনিধি আমেরিকাঃ বাংলাদেশের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ জানুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক সমাবেশে একজন দার্শনিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এক হাজার যোগ্য ব্যক্তির মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়েও বেশী ক্ষতি হয় যখোন কোন অযোগ্য ব্যক্তি ক্ষমতায় আসে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র সকল জায়গায় বিষয়টি সমানভাবে প্রযোজ্য। শেখ হাসিনা বলেন, ইউনূসের মত অযোগ্য ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখলের পরই দেশটা ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশটি সারবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছিল। আপনারা প্রবাসীরাও যেখানেই গিয়েছেন মর্যাদা পেয়েছেন। দেশটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিল, অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমাকে বলেছিলেন যে, আপনার ম্যাজিকটি কি? কীভাবে উন্নতি করছেন? জবাবে আমি বলেছি, আমার কাছে কোন ম্যাজিক নেই। আমি দেশের মানুষকে ভালবাসী। আমার বাবাও ভালবাসতেন, আর সেই ভালবাসা তিনি আমাকে শিখিয়েছেন। জাতির পিতা বলেছেন, ‘মানুষকে ভালবাসতে শিখো। দেশের মানুষকে ভালবাসো। এই ভালবাসার মধ্যে যেন কোন খাদ না থাকে।’ আমি আমার বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। নি:স্বার্থভাবে মানুষকে ভালবেসে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। তাদের দু:খ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছি। চেষ্টা করেছি গোটা বাংলাদেশে সুষম উন্নয়ন দিতে। তা রাজধানী ভিত্তিক ছিল না, গ্রামভিত্তিক উন্নয়নে কাজ করেছি বলেই বাংলাদেশ উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আজ সব ধ্বংস করে দিল। একটি মানুষের লোভের আগুনে বাংলাদেশ জ্বলে-পুড়ে ছাড়খার। শেখ হাসিনা বলেন, এই দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্যে আপনাদের সহযোগিতা দরকার। তাহলেই আবার বাংলাদেশের উন্নয়নে দায়িত্ব নিতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী অঙ্গ সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক, ও মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে এ সমাবেশে টেলিফোনে প্রদত্ত বক্তব্যে বরাবরের মত তার আমলের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিবরণী উপস্থাপনের পর শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্ষতি রোধ কল্পে আমি ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ত্যাগ করেছি। এরপর আমার বিরুদ্ধে আড়াই শত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর। শেখ হাসিনা বলেন, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলাসহ বাংলাদেশে যত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল সবকটির বিচার করেছি। একুশ আগস্টে গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িতদেরও বিচার হয়েছে। অপরাধীরা প্রচলিত আইনে দন্ডিত হবার পর শাস্তি ভোগ করছিল। ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর সকল সন্ত্রাসী আর জঙ্গিকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবে জেলখানা খালি করার এখন তা ভরছে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী দিয়ে। শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে। শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় তিনশ সাংবাদিকের চাকরি খেয়েছে। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কেড়ে নিয়েছে। হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে এজন্যে যে, সে সব মামলায় জামিন হয় না।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আমি যাদের হত্যা করেছি বলে মামলা দিয়েছে, এরমধ্যে ৩৫ জন জীবিত ফিরেছে। আর অনেকের মা-বাবা এখন বলছেন যে, তাদের সন্তানেরা খুন হয়নি, অসুস্থ কিংবা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আবার অনেকে জীবিত ফিরে সভা-সমাবেশে বক্তৃতাও দিচ্ছে। তাহলে এভাবে হত্যা মামলা দেয়ার অর্থটা কি?

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ড. প্রদীপ করের সভাপতিত্বে শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে রেখে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রবাসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণের প্রত্যাশার পরিপূরক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদাত্ত আহবান জানান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নূরুন্নবী, আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি আকতার হোসেন, শফিকুল আলম বরকত, ডা. মাসুদুল হাসান এবং ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলি সিদ্দিকী ,ড.দিলীপ নাথ ।ড. নূরুন্নবী উল্লেখ করেন যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন কথিত উপদেষ্টা পরিষদের জঙ্গিবাদি তৎপরতার বিস্তারিত তথ্য মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যকে অবহিত করতে হবে ।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ বখতিয়ারের সম্মিলিত সঞ্চালনায় এ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম জাহাঙ্গির, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোর্শেদা জামান, যুক্ত রাষ্ট্র যুবলীগের নেতা জামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় মিয়া, শ্রমিক লীগ নেতা জুয়েল আহমেদ, শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালালউদ্দিন জলিল এবং সেক্রেটারি কায়কোবাদ খান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত তালুকদার এবং দুলাল বিল্লাহ, পেনসিলভেনিয়া আওয়ামী লীগের নেতা আলিমউদ্দিন, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আতিকুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, স্ব্চ্ছোসেবক লীগের নেতা নুরুজ্জামান সরদার, সাখাওয়াত আলী বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা খোরশেদ খন্দকার, আসাদুল গনি আসাদ, আলী হোসেন গজনবী, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুমান আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ছিলেন।

সমাবেশের প্রায় সকলেরই প্রত্যাশা ছিল ১৩ বছরের পুরনো কমিটি বাতিল করে অধিকতর যোগ্য নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির ব্যাপারে সভাপতি শেখ হাসিনার ঘোষণার। কিন্তু বরাবরের মত চলমান ক্রান্তিকালেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশা নিয়েই এই সমাবেশ থেকে ঘরে ফিরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *