শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক): যশোরের কেশবপুরে পাওনা টাকা চাওয়াতে প্রতিপক্ষের বেধড়ক মারপিটে মনিরুল ইসলাম (৩৪) নামে এক যুবদলকর্মী গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার (১৮ জুন) সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। সে বরনডালী গ্রামের মৃত আলী বক্স মোড়লের ছেলে। এ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারপিটের মূল হোতা ও মামলার প্রধান আসামি একই গ্রামের রেজা হাসান সবুজ (৩৬) ও তার বড়ভাই মোস্তফা কামাল লিটন (৪২) এবং তার পিতা মশিয়ার রহমান গাজী (৬৮) কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে সরসকাঠি বাজারে মারপিটের ঘটনাটি ঘটে।
থানার মামলা ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার বরনডালী গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিন মোল্যার ছেলে জাকির হোসেন একই গ্রামের মশিয়ার রহমান গাজীর ছেলে রেজা হাসান সবুজের কাছে ১০ হাজার টাকা পায়। সেই সূত্র ধরে গত ১৭ জুন বিকেলে সরসকাটি বাজারে জনৈক ইব্রাহিম হোসেনের চায়ের দোকানের সামনে সবুজকে পেয়ে জাকির হোসেন পাওনা টাকার তাগাদা দেয়। ওইসময় সবুজ ক্ষিপ্ত হয়ে জাকিরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং সবুজের ডাকে তার পিতা মশিয়ার রহমান (৬৮), আপন বড়ভাই গোলাম মোস্তফা কামাল লিটন (৪২), একই গ্রামের শামছের মোড়লের ছেলে রুবেল হোসেন (২৫), মৃত কিতাব উদ্দীন দফাদারের ছেলে সালাউদ্দিন দফাদার (৩৫), শওকত শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০), সিরাজ সরদারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫), ওমর আলী দফাদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩০), সামাদ গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলাম (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জন বেআইনী জনতাবদ্ধে ঘটনাস্থলে এসে জাকিরকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করতে থাকে। ওইসময় একই গ্রামের আত্মীয় মিজানুর রহমান (৪২) ও তার বড়ভাই ডাক্তার হাসানুর রহমান (৪৬), ছোটভাই মনিরুল ইসলাম (৩৪), ভাইপো শফিকুল ইসলাম (২৮) এবং আত্মীয় একই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (৩২), ও খালেক গাজীর ছেলে কাসেম গাজী (৩৫) ঠেকাইতে গেলে সবুজের হুকুমে ও নেতৃত্বে সকলেই একজোটবদ্ধ হয়ে লোহার রড, আম গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। মারপিটের একপর্যায়ে গোলাম মোস্তফা কামাল লিটন তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মনিরুল ইসলামের মাথায় স্বজোরে আঘাত করলে মাথার হাড় ভেঙ্গে রড ভিতরে ঢুকে গিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় এবং মাথার ঘিলু বের হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ওইসময় সবুজ মনিরুলের পুনরায় মাথায় আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এছাড়াও সবাইকে মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফোলা জখম করে। তাদের ডাকচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা খুন জখমের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। ওইসময় এলাকাবাসী গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মনিরুলসহ সকল আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে মনিরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে রেফার্ড করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার সকালে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা এবং পরিবারে মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মারাপিটের ঘটনা উল্লেখ করে নিহতের আপন বড়ভাই মিজানুর রহমান (৪২) বাদী হয়ে একই গ্রামের রেজা হাসান হরফে সবুজ (৩৬), তার বড়ভাই গোলাম মোস্তফা কামাল লিটন (৪২) ও পিতা মশিয়ার রহমান (৬৫), একই গ্রামের শামছের মোড়লের ছেলে রুবেল হোসেন (২৫), মৃত কিতাব উদ্দীন দফাদারের ছেলে সালাউদ্দিন দফাদার (৩৫), শওকত শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০), সিরাজ সরদারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫), ওমর আলী দফাদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩০), সামাদ গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলাম (২৫) এর নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। যার মামলা নং-১০।
পরবর্তীতে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন এর দিকনির্দেশনায় চিংড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পুলিশ পরিদর্শক শামীম হোসাইন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রেজা হাসান সবুজ, তার বড়ভাই মোস্তফা কামাল লিটন ও তার পিতা মশিয়ার রহমান গাজীকে গ্রেফতার করেন।
নিহতের স্ত্রী জুই খাতুন বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যেই আমার স্বামীকে বেধড়ক মারপিট করে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটেছে। এমন নৃশংস হত্যার প্রশাসনের নিকট সঠিক বিচার এবং জড়িতদের ফাঁসির দাবী করছি।
নিহতের বড়ভাই মিজানুর রহমান বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যেই আমার ভাইয়ের মাথায় লোহার রড ও দায়ের কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের মূল আসামি সবুজসহ জড়িত সকলের ফাঁসি চাই।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিপক্ষের বেধড়ক মারপিটে গুরুত্বর আহত হয়ে মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবদলকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। নিহতের আপন বড়ভাই মিজানুর রহমান বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি রেজা হাসান সবুজ, তার বড়ভাই মোস্তফা কামাল লিটন ও পিতা মশিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বুধবার দুপুরে যশোর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।