তমালিকা মল্লিক প্রতিবেদকঃ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বৈষম্য নিরসন ও কাঙ্খিত উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজেরপ্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, ওই অঞ্চলের সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপগ্রহণ না করলে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান আরো নাজুক হবে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথাবলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষাআন্দোলন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। মূল বক্তব্যউত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। আলোচনায় অংশ নেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’র সদস্য সচিবশরীফ জামিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র যুগ্ম সম্পাদকআমিনুর রসুল, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপকমীর মোহাম্মদ আলী, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটিরসাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেকসভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও কল্যাণ সম্পাদক তানভীরআহমেদ, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠক সাকিলাপারভীন, লিডার্সের অ্যাডভোকেসি অফিসার তমালিকা মল্লিক প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ কবলিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের (খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট) বিদম্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনায় মোহনকুমার মণ্ডল বলেন, ওই এলাকার সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়নে সমন্বিতপদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতেহবে। স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ওই এলাকার প্রতিটিবাড়ীকে দুর্যোগ সহনশীল করে গড়ে তুলতে হবে। সুপেয় পানির স্থায়ীসমাধানে বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী ও জলাশয়কে অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। সুন্দরবন সুরক্ষায় কার্যকরপদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওইএলাকায় বরাদ্ধ দিতে হবে এবং তা ব্যবহারে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেহবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেনজলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে অঞ্চল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয়অঞ্চল। এ অঞ্চল প্রকৃতিগত ভাবে একটি ঐশ্বর্যপুর্ণ এবং ভু রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপকূল ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি অনাচারবন্ধ করতে হবে। অন্যত্থায় আমাদেরকে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখী হতেহবে। বাংলাদেশের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভয়াবহক্ষতির সন্মূখীন হবে।
উপকূলের উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বাপা’র যুগ্মসম্পাদক আমিনুর রসুল বলেন, এই অঞ্চলটি দীর্ঘ অবহেলার শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি এবং পরিকল্পিতঅবকাঠামোর অভাবে মারাত্মক সংকটে আছে সেখানকার জনগণ। তাইউপকূলের উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে বলে আশা প্রকাশকরেন তিনি।
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়ার পরথেকে সাগরে না যাওয়া জেলেদের জীবন-জীবিকার বিষয়ে ভাবতে হবে। এনার্জির নামে উপকূলের নদীগুলোকে ধ্বংস করায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তইলিশের উপর নির্ভরশীল জেলেরা। তাছাড়া নদীর ছোট নৌকা দিয়েমাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জাহাজ চলাচলের কারণে মাছ ধরাইঅনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। ফলে ওই নদীর জেলেরা মালিক থেকে সাগরেরমাছ ধরা জাহাজের শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে। এ সকল সংকট নিরসনেসরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।