শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) : যশোরের মণিরামপুরে কুয়াদা জামতলা নামকস্থান হতে প্রাইভেটকার থেকে নগদ হাউজের টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করাসহ ছিনতাইকৃত নগদ ৩২ লক্ষ ৫ হাজার ৫ শত টাকা উদ্ধার এবং ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা ডিবি পুলিশ। গত ১৮ জুন সকালে যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও আসামীদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাপাতি, একটি ধারালো চাকু ও লুন্ঠিত টাকা বহনকারী একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, যশোর কোতয়ালী মডেল থানার পোষ্ট অফিস পাড়ার মৃত খোরশেদ আলম মির্জার ছেলে ইউসুফ আলী হরফে সাজু (৩১), ঝিকরগাছা থানার বাকড়া দিগদানা গ্রামের ইসরাইল গাজীর ছেলে রনি গাজী (২৬) একই গ্রামের রাশেদুল ইসলাম খার ছেলে সুজন ইসলাম (৩৩), একই গ্রামের মৃত দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে ইমাদুল গাজী (৪৬) ও ইমদাদুল গাজীর ছেলে নাসিম গাজী (১৯), খোষাল নগর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে সাগর হোসেন (২৪), একই গ্রামের মজনুর রহমানের ছেলে সোহেল রানা (২১), জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল অনুমান ০৯.৪৫ ঘটিকায় নগদের ডিস্টিবিউটর রবিউল ইসলাম একটি প্রাইভেটকারযোগে যশোর শহর থেকে মণিরামপুরে যাওয়ার পথে কুয়াদা জামতলা নামকস্থানে পৌঁছালে তাদের পিছন দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেলযোগে এসে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি ধারালো চাপাতিসহ প্রাইভেটকারটির গতিরোধ করে। ওইসময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে প্রাইভেটকারের গ্লাস ভাংচুর করে এবং তাদের ধারালো চাপাতি দিয়ে প্রাইভেটকারের ভিতরে থাকা নগদের ডিস্টিবিউটর রবিউলকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে নগদ হাউজের টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। ওইসময় রবিউল ইসলাম জাতীয় জরুরী পরিসেবা ৯৯৯ এ কল করে ঘটনার বিষয়ে জানালে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর হওয়ায় যশোর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন
কর্মকর্তাগণের নেতৃত্বে মনিরামপুর থানা পুলিশ, ডিবি ও সাইবার ক্রাইম টিম ঘটনার রহস্য অনুসন্ধান সহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার অভিযানে নামে। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলসহ অন্যান্য তথ্য প্রমাণ অনুসন্ধান এবং পুলিশি কলাকৌশল প্রয়োগ করে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরপর ডিবি পুলিশসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম আসামিদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে জড়িত আসামি সাগর হোসেন (২৪) কে ঝিকরগাছা থানার খোষাল নগর এলাকা হতে গ্রেফতার করে এবং তার হেফাজত থেকে ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত একটি আরটিআর (RTR) মোটরসাইকেল উদ্ধার পূর্বক জব্দ করেন। ডিবি পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সাগর ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং অন্যান্য জড়িত আসামীদের নাম প্রকাশ করেন। তার দেওয়া তথ্যমতে অন্যান্য আসামিদের ধরতে জেলার বিভিন্নস্থানে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে আরো ৬ জন আসামিকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেন।
পরবর্তীতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা নগদের টাকা বহনকারী প্রাইভেটকার চালক ইউসুফ আলী হরফে সাজু (৩১) এর সাথে যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই করেছে।
একপর্যায়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের দেখানো মতে ঝিকরগাছা থানার দিগদানা গ্রাম থেকে ধৃত আসামী ইমদাদুল গাজী (৪৬) এর হেফাজত হতে ১৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫ শত টাকা এবং আসামী সুজন ইসলাম (৩৩) এর বাড়ি থেকে ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ছিনতাইকৃত ৩২ লক্ষ ৫ হাজার ৫ শত টাকা উদ্ধার করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সকলেই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করেন। এছাড়াও আসামীরদের নিকট হতে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাপাতি, একটি ধারালো চাকু ও লুন্ঠিত টাকা বহনকারী একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্তে থানায় মামলা রুজু করে গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেছে ডিবি পুলিশ।
যশোর জেলা পুলিশ বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।