আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের গরুর হাল চাষ

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাইয়ে এক সময়ে হালচাষের গরু ও মহিষ দেখা যেত গ্রামের ফসলি জমিতে। বর্তমান যুগে পশু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এসেছে মেশিন-ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার ইত্যাদি । এজন্য নতুন প্রজন্মের অনেকেই জমিতে গরু দিয়ে লাঙল কিংবা মই টানা দৃশ্যের সঙ্গে অপরিচিত। প্রযুক্তির যুগে বিলুপ্তির পথে চিরচেনা এই পদ্ধতি।কৃষকের উন্নতির উপর নির্ভর করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ।কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী তার ‘চাষী’ কবিতায় বলেছেন,সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।সে সময় গরু-মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু দিয়ে লাঙল ও মই টানার মাধ্যমে হাল চাষের বিকল্প ছিল না।কৃষকরা ভোরবেলা মাঠে গিয়ে দুপুর পর্যন্ত এভাবে হাল চাষ করতেন।দেশের অনেক কিছুতেই ডিজিটালের সু-বাতাস বইছে এবং মানুষ ডিজিটালাইজেশন সুবিধাগুলো পাচ্ছে অনেক সহজেই।সেই অগ্রযাত্রা থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও।দিন দিন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে সারাদেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙ্গালী’র চিরচেনা সেই গরু, লাঙল, জোয়াল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী একটি চিরায়িত পদ্ধতি ছিলো গরু-মহিষের কাঁধে জোয়াল বেঁধে লাঙল টেনে জমি চাষ। এটি ছিলো জমির উর্বরতা বৃদ্ধির মূল উপকরণ হিসেবে কৃষি পদ্ধতি।সেই সাথে কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটছে।তবে গরুর গাড়ি শুধু দেখা যায় বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ পালন করতে।
এক সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকেই নিজের হালচাষের পাশাপাশি অন্যের জমিতে টাকার বিনিময়ে হালচাষ করতেন।বর্তমানে প্রাকৃতিক নানান অসংগতির কারণে খরার প্রভাব পড়ায় তড়িৎ সময়ে জমি চাষে কৃষকরা পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে জমি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।তাই কৃষকরা এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু,মহিষ,লাঙল,জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষের পদ্ধতি।
কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হাতিয়র কাজীপাড়া গ্রামের কৃষক শওকত আলী মন্ডল বলেন,দীর্ঘদিন থেকে হালচাষের কাজ করে আসছি। বাড়িতে হালচাষের গরু রয়েছে। এক জোড়া হালের গরু ক্রয়করতে ১লক্ষ ৩০ হাজার থেকে দেড় লক্ষাধীক টাকা লাগে। এছাড়া বাজারে গরুর খাবারের মূল্য বেশি, একজন হালিয়ার মজুরী ও পরিচর্যা ব্যয়ভার থাকায় গরুর হাল কেউ রাখতে চায়না। চাষের জন্য হালের কাজে উপকরণ হিসেবে কাঠের তৈরি লাঙল, বাঁশের তৈরি জোয়াল, মই ইত্যাদির নির্মাণ ব্যয় অনেক।
পুনট ইউনিয়নের পশ্চিম নয়াপাড়াগ্রামের কৃষক আঃ জব্বার বলেন, ধানের বীজ তলা তৈরীতে গরু দিয়ে হাল চাষ করছি। গরীব মানুষ তাই আমি আমার হালের গরু দিয়ে হাল চাষ করে বীজ তলা তৈরী করছি। আর গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ফলন বেশী হয়।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, গরু, মহিষ, লাঙল ও জোয়াল ছিলো আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি।সেই সময় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া স্পর্শ করেছিলো না । কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পুরাতন চাষ পদ্ধতিকে আমূল পরিবর্তন করেছে । কৃষকরা আগে যা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়াই তার চেয়ে বেশি অনেক বেশি পাচ্ছেন।অধিক ফলনশীল জাতের ফসল চাষ করে কম সময়ে-অল্প খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন, শুধুমাত্র আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়াই।আগামীতে কৃষিতে আরও পরিবর্তন আসবে যা কৃষকদের ডিজিটাল বানিয়ে দেবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.