মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা আলু উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম উপজেলা হিসাবে পরিচিত। এ উপজেলার মাঠগুলো এখন সবুজের সমারোহে জরিয়ে আছে, তাকালেই যেন চোখ জুরিয়ে যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা আলুচাষী ও কৃষি বিভাগের। আবহাওয়া ভাল থাকলে কিছুদিন পর থেকে উৎপাদিত আলু ঘরে তুলবেন চাষিরা। সে জন্য আলুর পরিচর্যা নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ এলাকার কৃষক ।
আলু চাষীদের অভিযোগ চলতি মৌসুমে আলুর ফলন ভাল হলেও দাম কম হলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। আগের সব দুঃখ-কষ্ট ও বেদনা ভুলে গিয়ে ভাল দাম পাবার আশায় এ বছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। রোপা আমন ধান কাটার পর পরেই কৃষকরা তাদের জমিতে আলু বীজ রোপনের কাজ শুরু করেন। তবে এ বছর আলুর ন্যায্য মূল্য পাওয়ার দাবি চাষীদের।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে কালাই পৌরসভাসহ মাত্রাই, উদয়পুর, আহম্মেদাবাদ, জিন্দারপুর ও পুনুট ওই ৫ টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৭শ’ ১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও১০ হাজার ৬শ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৬৯ মেট্রিকটন। এসব জমিতে উফশী জাতের আলুর মধ্যে মিউজিকা, ডায়মন্ড, গ্যানুলার, এস্টোরিক, কার্ডিনাল, রোজেটু, ক্যারেজসহ দেশী পাকড়ি জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে রুমানা, তেল পাকড়ি, ফাটা পাকড়ি, পাহাড়ি পাকড়ি আলুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩শ’ হেক্টর জমিথেকে আলু উত্তোলন করা হয়েছে। তাদের এসব জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের আলু রোপণের পরামর্শ প্রদান করেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এতে এ অঞ্চলের আলুর মান ভাল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি হয়।
উদয়পুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন কৃষক বলেন, আমি গত বছর লছে পরে এবার কম জমিতে আলু লাগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এ বছর আলুগাছ অনেক ভাল হয়েছে আশা রাখছি খুব ভাল ফলন হবে।
একই গ্রামের কৃষক কামিরুল ইসলাম বলেন, জমি পত্তন নিয়ে আলু লাগিয়েছি। আবহাওয়া ভাল থাকায় আলু গাছের চেহারা ভালই দেখা যাচ্ছে। তবে গত বছরের মত যদি দাম না পাই তাহলে এবার সংসারের বারটা বাজবে।
পুনট ইউনিয়নের পশ্চিম নয়াপড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, জমি পত্তন হতে শুরু করে জমিচাষ, সার ও বীজসহ কৃষিপূর্ণ সামগ্রী জিনিস পত্র চরা দামে কিনতে হয়েছে, এতে করে আলুর দাম যদি মন প্রতি সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা থাকে তাহলে আমাদের কোনমতে গা বাঁচবে ।
আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন হাতিয়র গ্রামের কৃষক শাহীন মন্ডল বলেন, আমাদের কালাই উপজেলার আলুর মান সবচেয়ে ভাল বিধায়, এখানকার আলুর চাহিদা বাহিরে অনেক বেশি। তবে চাহিদা থাকলেও আমারা কৃষকরা আশানুরূপ আলুর দাম পাইনা। যার কারনে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, বরাবরই মতোএ উপজেলার আলু মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। এখানকার আলুর ফলন এবং মান ভালো হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারা বিভিন্ন দেশে আলু ইনপোটাররা আছে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। আমরা আশাবাদি এবার এখান থেকে বেশ ভাল পরিমাণে আলু রপ্তানি হবে এবং এখানকার কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।