গণঅধিকার পরিষদ কোন ইস্যুতে ভাঙ্গছে

কালের সংবাদ ডেস্কঃ ড. রেজা কিবরিয়া নুর ও রাশেদকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

দুই নেতার বিরোধের কারণে দল ভেঙে যাক- এটা নেতাকর্মীরা চান না। রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ আলোচনায় এসেছিল নানা ইস্যুতে। অনেকটা মূল ধারার রাজনীতির কাছাকাছি উঠে আসা দলটিতে এখন চলছে অস্থিরতা। দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বের জেরে নেতাকর্মীরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। সোমবার রাতে দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ককে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে এই অস্বস্তি আরও বেড়েছে। তাদের মধ্যে যেসব বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে, তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা দলীয় ফোরামেই তদন্ত হতে পারে। এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। প্রশ্ন উঠছে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলটিতে কেন এই অস্থিরতা? এর নেপথ্যেই বা কী? শুধু কী মতবিরোধ নাকি অন্য কোনো কারণ আছে এই অস্থিরতার পেছনে? এমন প্রশ্ন দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, দলের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পর থেকেই এই অস্থিরতা বেড়েছে। কারণ হঠাৎ করে ওই সংগঠনটির সামনে আসা নিয়ে বিরোধী শিবিরে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

হাজারো নেতাকর্মী এনে ঢাকায় সমাবেশ করা এই সংগঠনের আর্থিক সঙ্গতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে বিরোধীদের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে কোনো পক্ষ এই সংগঠনের নেপথ্যে থাকতে পারে। এমন সন্দেহ থেকেই ইনসাফ কায়েম কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে বিএনপি’র সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ১৬ই মার্চ বনানী শেরাটনে নৈশভোজের আয়োজন করে আলোচনায় আসে ইনসাফ কায়েম কমিটি। এরপরই শওকত মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বশেষ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বড় শোডাউন করে ইনসাফ কায়েম কমিটি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে জড়ো করা হয় সেখানে। ওই অনুষ্ঠানে ড. রেজা কিবরিয়া অংশ নিয়েছিলেন।

বিরোধী দলগুলো মূলত বিএনপি’র সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন করে আসছে। ইনসাফ কায়েম কমিটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় শওকত মাহমুদকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এতে পরিষ্কার হয় ইনসাফ কায়েম কমিটির তৎপরতা বিএনপি ভালো চোখে দেখছে না। এমন অবস্থায় ওই কর্মসূচিতে ড. রেজা কিবরিয়ার অংশ নেয়াকে উদ্দেশ্যমূলক হিসেবে দেখছেন তার দলের নেতারা। সূত্রের দাবি সন্দেহজনক তৎপরতার কারণে ১২ দলীয় জোট থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের লেবার পার্টি ও ক্বারী আবু তাহেরের এনডিপিকে বের করে দেয়া হয়।

সংগঠনের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দলীয় ফোরামে উপস্থাপন না করায় তার বিষয়েও নানা সন্দেহ তৈরি হয়। এসব কারণে দিনে দিনে অভ্যন্তরীণ জটিলতা আরও বেড়েছে। সর্বশেষ রোববার ড. রেজা কিবরিয়ার গুলশানের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাকবিতণ্ডা ও একে অপরের প্রতি অভিযোগ তুলে ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পরের দিন রেজা কিবরিয়া ব্যক্তিগত কাজে কম্বোডিয়া সফরে যান।

সূত্রের দাবি নুর ওই বৈঠকে দ্রুত একটি কাউন্সিল করে কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। কিন্তু দলের অনেকে এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন আগে বিদ্যমান সংকট দূর করতে হবে। তারপর সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। এ লক্ষ্যে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বাইরে অন্য নেতারা ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

ওদিকে গতকাল ড. রেজা কিবরিয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তিনি যেহেতু দলের আহ্বায়ক, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন তার নামেই হবে। দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা তার সঙ্গেই আছেন। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ড. রেজা কিবরিয়া দলের কর্মসূচিতে সময় দেন না। কিন্তু তিনি ইনসাফ কমিটির মতো সংগঠনে নিয়মিত যাচ্ছেন। এ কারণে আমাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এতে মনে হয়েছে তার সঙ্গে আমাদের থাকা ঠিক না। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন নস্যাৎ করতে বিএনপি ভাঙার যেসব প্রক্রিয়া আছে তিনি এসবে যুক্ত হচ্ছেন। অথচ আমরা বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছি। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া।

এর আগে গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যকার কিছু বিষয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল গণতন্ত্র মঞ্চে। ওই অস্বস্তি টের পেয়েই মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদ সরে আসে।
দলটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিএনপিতেও এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, চলমান ঘটনাপ্রবাহ গণঅধিকার পরিষদের নিজস্ব বিষয়। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে জানিয়েছেন, গণঅধিকার পরিষদের বিষয় তারা নিজেরাই দেখবে। এখানে বিএনপি’র কোনো বক্তব্য নেই।

পাঁচ বছর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছিল ছাত্র অধিকার পরিষদ। এরপর শিক্ষার্থীদের নানা দাবিতে সোচ্চার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান। নানা ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আলোচিত হন রাজনীতির মাঠে। নানা সময়ে হামলার শিকার হয়েছেন নুর ও তার সংগঠনের কর্মীরা। ছাত্র অধিকার থেকে ২০২১ সালের ২৬শে অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গণঅধিকার পরিষদ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়াকে করা হয় দলের আহ্বায়ক। সদস্য সচিব হন নুরুল হক নুর। নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে পরিষদ। প্রাথমিক বাছাইয়ের তালিকায় দলটির নাম রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.