মোঃ যুবরাজ মৃধা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ. মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু পরপরই গর্ত থাকায় বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের যাত্রী ও আরোহীদের শরীর ঝাঁকুনিতে ব্যথা হয়ে যায়। এতে যানবাহনের চালকসহ পরিবহনশ্রমিকেরাও দুর্ভোগ পোহান। এই চিত্র দেশের গুরুত্বপূর্ণ পটুয়াখালী-কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের কলাপাড়া উপজেলার ১১ কিলোমিটার অংশের।
দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পটুয়াখালী-কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়ক দিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া এই সড়কেই কুয়াকাটা মৎস্যকেন্দ্র ও মহিপুর-আলীপুর মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এই সড়কটি ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় মহাসড়কের এই ১১ কিলোমিটার দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ কয়েক হাজার যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মহাসড়কের ১১ কিলোমিটারে যথাযথভাবে সংস্কারকাজ করা হয়নি। এই কারণে ওই অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকসহ স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাখিমারা থেকে মহিপুর পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানের বিটুমিন উঠে গেছে। বের হয়ে আছে ইট-বালু-খোয়া। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ১১ কিলোমিটারে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই বর্ষায় এসব গর্তে পানি জমে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে যেসব গর্ত বড়, সেগুলোতে গাড়ির চাকা পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক বিভাগ গর্তে ইট ফেলে ভরাট করে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করছে।
এই মহাসড়কে চলাচলকারী রুদ্র-তুর্য্য পরিবহনের বাসচালক মো. শাহীন বলেন, এই রাস্তা পার অইতে যাইয়া জানের কিছু থাহেনা। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা বেসামাল অইয়া যায়। তাগের গালি শুনতে হয়।
পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, কলাপাড়ায় ১১ কিলোমিটার সড়কের দুরবস্থার কারণে বাসের যন্ত্রাংশ বিকল হয় যায়।এতে আমরাও আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছি।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি দিদারউদ্দিন আহমেদ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম মাছের মোকাম মহিপুর, আলীপুর এবং কুয়াকাটা। প্রতিদিন এখান থেকে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়। কোনো কোনো সময় মাছবোঝাই ট্রাক, পিকআপ বা লরির চাকা গর্তে পড়ে আটকে যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে মহাসড়কের কলাপাড়ার নীলগঞ্জ থেকে মহিপুর অংশের ১১ কিলোমিটারে কাজ শুরু হয় এবং ২০১২ সালে শেষ হয়। তবে সড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সওজ বিল আটকে দেওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালে জুন ও নভেম্বরে পটুয়াখালী দেওয়ানি আদালতে দুটি এবং ২০১৫ সালের ২১ মার্চে আরেকটি মামলা করলে আদালত ওই ১১ কিলোমিটার সড়কের কাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। এতে আট বছর মহাসড়কের ওই ১১ কিলোমিটার অংশে বড় ধরনের সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে।
সওজ পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ জানান, নিষেধাজ্ঞা থাকায় সড়ক সংস্কার করা যায়নি। শুধু রুটিন মেরামত করে ওই অংশটুকু সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। শিগরোই মহাসড়কের ওই অংশে কাজ শুরু হবে।