ভাঙ্গুড়ায় কৃষকদের নলকূপ আ.লীগ নেতার দখলে

সিরাজুল ইসলাম আপন, ক্রাইম রিপোর্টার (পাবনা): পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ২০ জন কৃষকের টাকায় স্থাপন করা বোরো চাষের গভীর নলক‚প নিজের নামে লাইসেন্স করে নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ। উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামে বিএডিসি অফিসের সদ্য বিদায়ী উপসহকারী প্রকৌশলী ইয়াকুব আলীর যোগসাজশে শামীম আহমেদ এই কাজ করেছেন। নিজের নামে লাইসেন্স করে ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার পরই শামীম আহমেদ অন্য সদস্যদের মালিকানা থেকে বাদ দিয়েছেন। এতে নিরুপায় হয়ে মালিকানা ফিরে পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ১৫ কৃষক।

জানা যায়, ২০০৮ সালে উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমেদ সহ ২০ জন কৃষক প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যায়ে বোরো চাষের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করে। এই নলক‚প স্থাপন করা হয় শামীম আহমেদের জমিতে। সে সময় নলক‚পের বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয় অপর সদস্য নাসির উদ্দিনের নামে। এরপর ৬ লাখ টাকা ব্যায়ে সদস্যদের টাকায় জমিতে পানি সরবরাহের পাইপ লাইনও করা হয়। পরবর্তীতে গত বছর নাসির উদ্দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সদস্য থেকে অব্যাহতি নেন। ফলে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে উপজেলা সেচ কমিটির লাইসেন্স ও নাসির উদ্দিনের সংযোগ হস্তান্তর প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হয়। কিন্তু নাসির উদ্দিন হস্তান্তর পত্র প্রদান করেনি। এতে চলতি বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শামীম আহমেদ প্রভাব খাটিয়ে গোপনে নিজের নামে উপজেলা সেচ কমিটি থেকে বিএডিসির লাইসেন্স ও পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ করে নেন।

এদিকে এই গভীর নলকূপ স্থাপনের সময় দেড়শ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে শামীম সহ ২০ সদস্যদের স্বাক্ষরিত মালিকানা ও অঙ্গীকারনামা লিখিত করা হয়। তবে সেই অঙ্গীকারনামা এখন আর মানছেন না শামীম আহমেদ। গত ফেব্রুয়ারি মাসের সংযোগ চালু হওয়ার পরই শামীম আহমেদ অর্ধেক সদস্যকে বাদ দেন। সেসময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সাময়িক সুরাহা হয়। কিন্তু সম্প্রতি শামীম আহমেদ এই গভীর নলক‚প নিজের একক মালিকানা দাবি করে আগামী মৌসুমে কাউকে সাথে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে নিরুপায় হয়ে ১৫ কৃষক গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাদের মালিকানা ফিরে পেতে লিখিত অভিযোগ করেন। কৃষকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত সোমবার (১২ জুন) অভিযোগকারী ১৫ কৃষক ও আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমেদকে নিজ কার্যালয়ে ডাকেন। তবে শামীম আহমেদ নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাননি।

এ বিষয়ে গভীর নলক‚পের অংশীদার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শামীম এই নলকূপের জন্য সরকারি বরাদ্দ হওয়া পাইপ লাইনের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাৎসরিক কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ দেন না তিনি। এখন বলছেন নলকূপ তার একার। এতে আমরা কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছি তার কাছে। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আ.লীগ নেতা শামীম আহমেদ কৃষকদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে কালের সংবাদকে বলেন, মালিকানা নলকূপ কখনো নিজের নামে করে নেয়া যায় না। নলকূপটি যৌথভাবেই আছে। এ বছরেও কৃষকরা যৌথভাবেই নলকূপের ধান উঠিয়েছে। হয়তো কৃষকদের কেউ ভুল বুঝিয়ে এই অভিযোগটি করিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএডিসি অফিসের সদ্য বিদায়ী উপসহকারী প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘আমি জানি কয়েকজন কৃষক মিলে এই নলকূপ বসিয়েছে। তবে সমিতির নামে লাইসেন্স না হয়ে লাইসেন্সটি হয়ে গেছে শামীম আহমেদের ব্যক্তিগত নামে। এখন আমার কিছু করার নেই। এ ব্যাপারে কৃষকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি নাহিদ হাসান খান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.