সাদি মোহাম্মদ, আমেরিকা- লেখক, গবেষক / বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট: বাংলাদেশে ছাত্রদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাননীয় সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন যে দেশে কারফিউ জারি করা না হলে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দখলসহ সরকারকে পদচ্যুত করার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
অভিযোগটা কিন্তু ভীষণ গুরতর এবং স্পর্শকাতরও। তবে গণ-অভ্যুত্থান কখন হয় বা হতে পারে এবং কী কারণে হয় সে বিষয়ে নিশ্চই জনাব কাদের অবগত আছেন।
গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সত্যিসত্যিই বর্তমান সরকারকে পদচ্যুত করা হলে বাংলাদেশের অবস্থা কীরকম হত তা অনুমান করতেও ভয় হচ্ছে আমার।
আমার ধারণা তাতেকরে আরও ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে কয়েক শত নয় কয়েক হাজার মানুষ মারা যেত। সীমাহীন লটুপাট আর ভাঙচুর অগ্নি সংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসলীলা সাধিত হত।
দেশ বর্তমান অবস্থার থেকে আরও অনেক বেশি খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়াত। সেরকম পরিস্থিতির তৈরি হলে দেশ ও দশের জন্য তা কোন ভাবেই মঙ্গলজনক হত না। কারণ গৃহযুদ্ধের ন্যায় কোন পরিস্থিতিই কোন দেশের জন্য মোটেই সুখকর নয়। সেই দিক থেকে কারফিউ দেয়াটা যুক্তিযুক্ত ছিল বলেই প্রতিয়মান হয়।
তবে আমার আজকের লেখার প্রসঙ্গ কোন ভাবেই কারফিউ নিয়ে নয়। আমি আমার লেখায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের করণীয় বিষয় সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চেষ্টা করবো।
প্রথমত একটা রাজনৈতিক দল দির্ঘদিন যাবত ক্ষমতায় থাকলে দলটির নিজস্বতা বলতে তেমন কিছু থাকে না। তার প্রায় সবকিছুই সরকারের মধ্যে বিলিন হয়ে যওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই সেরকম।
রাজনীতিতে দল বলতে যা বোঝায় বর্তমান আওয়ামী লীগ আর সেরকমটি নাই কোন অবস্থাতেই। আজ আওয়ামী লীগ বলতে যা আছে তা শুধু সরকারেই আছে। অর্থাৎ সরকার আছে যতক্ষণ আওয়ামী লীগ আছে ততক্ষণ। ক্ষমতা শেষ হলে আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে আমার ধারণা। এর সবচেয়ে বড় কারণ ক্ষমতা ছাড়া পরিস্থিতিতে বর্তমানের ক্ষমতার ভাগীদারদের একজনকেউ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তার কিছুটা এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমেই দেখা গেছে। দলের বর্তমান অবস্থা এরকম যে যা করার পুলিশই করবে। খালি খালি নিজেদেরকে ঝুকির মধ্যে ফেলে লাভ কী। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ অনেকটাই সুবিধাবাদীদের দল। এই সুবিধাবাদীরা ততক্ষণই দলের সঙ্গে আছে দল যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতা নাইতো তারাও নাই। যদি সুবিধাবাদীরা না থাকে, দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতা কর্মীরাও (যারা দল থেকে পুরোপুরি নির্বাসিত বর্তমানে) না থাকে তাহলে দল থাকবে কীভাবে ? দল আর সরকার একাকার হয়ে গেলে কী হয় ক্ষমতায় না থাকলে আওয়ামী লীগ তা ভবিষ্যতে হাড়েহাড়ে টের পাবে।
আর তাই ভবিষ্যতে দলের অস্তিত্ব টিকায় রাখতে হলে দল হিসেবে বর্তমান আওয়ামী লীগের সংস্কার করা ছাড়া কোন উপায় নাই। এটা যতো তাড়াতাড়ি করা সম্ভব করা দরকার এবং তা দলের জন্য মঙ্গল।
দলের যাবতীয় আগাছা পরগাছা নিধনসহ সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদেরকে এখনই দল থেকে বের করে সৎ যোগ্য এবং প্রকৃত ত্যাগী নেতা কর্মীদেরকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে আনার সুব্যাবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ত্যাগী নেতা কর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ ভোমড়া।
সরকার থেকে দল আলাদা না করলে। দলের সংস্কার না হলে। উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদেরকে বাদ দিয়ে সৎ এবং যোগ্য নেতাদের মুল্যায়ন না করলে। পুলিশ বিজিপি সেনাবাহিনী দিয়ে আওয়ামী লীগ এবার কোনমতে পার পেলেও আগামীতে পার পাবে বলে মনে হয় না। কারণ শেষপর্যন্ত রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয় রাজনীতি দিয়েই। আর তার জন্য দরকার হয় ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী।
আশাকরি বর্তান ঝড় থেমে গেলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা দলের দিকে নজর দিবেন। দলের সমস্ত দূর্বলতাকে খুঁজে বের করে দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন। দল আবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৎ যোগ্য ও ত্যাগী নেতা কর্মীদের কর্ম পদচারনায় মুখরিত হবে। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদেরকে দিয়ে রাজনীতির মাঠের বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলা করবে। দল চলবে দলের প্রকৃত নেতা কর্মীদের সঠিক ও সুযোগ্য নের্তৃত্বে।
আরও অনেক কিছুর সঙ্গে দলের সংস্কারও আজ সময়ের দাবী। আওয়ামী লীগ তার নিজের প্রয়োজনেই সেটি করবে বলে আশাকরি। সংকটে সংগ্রামে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে তার সমহিমায় এই প্রত্যাশা রইলো। জয়বাংলা। জয়বঙ্গবন্ধু। জয় হোক বঙ্গবন্ধু বাংলার মেহনতি মানুষের।