জয়পুরহাটে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত জন জীবন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমজীবী সবজিচাষী ও মৎসজীবী

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটে কয়েক দিনের টানা বর্ষনে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে জয়পুরহাট শহরের প্রধান সড়ক। অতি বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা কাজের সন্ধানে বাহিরে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন তারা। সংসার চালাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়াও অনেকেই এনজিওর কিস্তি পরিশোধে হাত বাড়াচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট।

গত কয়েক দিনে টানা ও ভারী বর্ষনের কারনে মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারায় বিপাকে পরেছে রিক্সা, ভ্যান ও আটো চালকরা । সারা দিনে যা আয় রোজগার হচ্ছে তা দিয়ে তাদের সংসারের খরচ চালানোই দায় হয়ে পরেছে তাদের।

পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের অটো চালক মাহবুব বলেন, অতি বৃষ্টির রাস্তায় লোক চলাচল নেই । যাত্রী অভাবে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে । সংসারের খরচ করবো কি দিয়ে, আর এনজিওর কিস্তিই বা দিবো কেমনে।

কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের ভ্যানচালক রুবেল হোসেন জানান, বৃষ্টির কারনে গত তিনদিন ধরে লোকজন বাহির হতে না পারায় কোন আয় না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে দূর্ভোগে পরেছি।

শুধু সাধারণ মানুষ নয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিভিন্ন এলাকার মৎসজীবী একই উপজেলার চেচুুড়িয়া গ্রামের মৎস্য চাষী ওয়াদুদ মন্ডল জানান, প্রাই দুই একর পুকুরে মাছ চাষ করি। গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিতে আমার পুকুর থেকে প্রাই ৭০-৮০ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। আমি এ ক্ষতি পোষাব কি করে ভেবে পাচ্ছি না।

এদিকে অতি বৃষ্টির কারণে প্রকৃতিক ভাবে রোপা আমন ধানের পোকা মাকড় দমনে উপকার হলেও জেলার আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি হিসাবে মুলা, মরিচ, সিম, লাউ, ফুলকপি, বাধা কপির খেত লাগানো হলেও জমিতে পানি জমে থাকার কারনে নষ্ট হতে শুরু করেছে। এতে কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।

পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী গ্রামে কৃষক রোস্তম আলী বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছিলাম। এবার জমিতে ভাল মুলা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তুু কয়েক দিনের অতি বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে থাকায় মুলা ক্ষেতগুলো মরে যাচ্ছে। অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।

একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, লাভের আশায় কচু ক্ষেত তুলে আগাম মরিচ চাষাবাদ করেছিলাম। কিন্তুু পানির কারনে সব সর্বনাশ হয়েছে।

উপজেলার খাসবাট্টা গ্রামের কৃষক মিনাজুল ইসলাম বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে আগাম বাধা কপি চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টির কারণে বাধা কপির চারা গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারনে আগাম সবজি চাষের জমি তৈরিতে বিলম্ব হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে লাগানো কপি গাছ নস্ট হয়ে যাচ্ছে ।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, বৃষ্টিতে আমন ফসলের অনেক উপকার হয়েছে। তবে আগাম সবজি চাষিরা একটু বেকায়দায় পড়েছে। বৃষ্টিতে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কারো ফসলের ক্ষতি হলে তাকে প্রনোদনার আওতায় আনা হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.