ভাঙ্গুড়ায় হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

সিরাজুল ইসলাম আপন, ক্রাইম রিপোর্টার (পাবনা): পাবনার ভাঙ্গুড়ায় অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে ভুয়া ডিগ্রীধারী ডাক্তার। আর এসব হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে চিকিৎসায় বিপাকে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ফলে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই অপচিকিৎসার বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

তথ্যমতে, কমপক্ষে এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি প্রাপ্তগণ ব্যতীত কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবি লিখতে পারবেন না। অথচ অনেকেই তাদের ব্যবহারিত প্রেসক্রিপশন প্যাডে নামের আগে ‘ডাক্তার” ডিগ্রী লাগিয়ে রোগীদের জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের শরৎনগর বাজারে সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ভূইয়া মেডিকেল নামে একটি ঔষুধ ফার্মেসির সামনে অনেক রোগী ভিড় করছেন। ভিতরে চেম্বারে রোগী দেখছেন শ্রী গজেন্দ্রনাথ সরকার। তিনি একজন গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বলে জানা গেছে। অথচ তিনি তার ছেলে সুমন কুমার সরকারের প্রেসক্রিপশন প্যাডে জটিল রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্যাডে লেখছেন অ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধও। চেম্বারের সামনে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রী গজেন্দ্রনাথ সরকার উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের পাটুল বাজারে প্রতিমা মেডিকেল হল নামে একটি ঔষুধ ফার্মেসি রয়েছে। এ ফার্মেসিটির তিনি মালিক। তিনি তার নামের সাথে ব্যবহার করেন (আর.এম.পি) সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, ঢাকা। তা ছাড়া তার আর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট নেই বলেও জানা গেছে। তিনি প্রতিদিন ৫০ জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেন। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে জটিল রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তার ছেলে সুমন কুমার সরকার ও জটিল রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। তার পেসক্রিপশন প্যাডে ডি.এম.এফ (ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ, ঢাকা), বিএমডিসি রেজিঃ নং- ডি-৮৮৮০ লেখা রয়েছে।

এছাড়া পৌর সদরের শরৎনগর বাজারে রয়েছেন লাকী মেডিকেল হলের মালিক আব্দুর রশিদ। তার এমবিবিএস ডিগ্রী না থাকলেও প্রেসক্রিপশন প্যাডে ‘ডা.’ ডিগ্রী ব্যবহার করেন। ভাঙ্গুড়া বাজারে নাবিল ফার্মেসির মালিক ছাইদুল ইসলাম। তিনি শিশু বিষেজ্ঞ না হলে ও নবাজতক ও শিশুসহ সকল প্রকার জটিল রোগী দেখেন। প্রতিদিন তিনি একশ জনেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করেন।

পুরাতন থানা ভবনের সামনে বসেন বাকী বিল্লাহ। তার সেখানে নিজের ঔষুধ ফার্মেসি রয়েছে। নিজের নামের আগে ব্যবহার করছেন ‘ডা.’ ডিগ্রী। তাদের এমবিবিএস ডিগ্রী না থাকলেও তারা নিজেকে ‘ডা.’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন জটিল রোগের চিকিৎসাও। নিজেদের প্যাডে লেখছেন অ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধও। আর এই ভুল চিকিৎসা ও মাত্রাতিরিক্ত ঔষুধের প্রেসক্রিপশনের কারণে হরহামেশাই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, এমবিবিএস না হলে নামের আগে ডা. লেখা এবং রোগীকে ব্যবস্থাপত্র লেখার কোন সুযোগ নেই। যে সকল পল্লী চিকিৎসক নিজেদেরকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা পত্র লিখে দিচ্ছে খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.