কর্মী সমর্থকদের মারমুখী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আবার জনগণের ভোট হারাবে বিএনপি

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি-লেখক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী : সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার কারণে জীবনভর এই একখান প্যারা নিয়ে চলতে হয় আমাকে। তা হলো- আমার কোনো লেখা বা বক্তব্য আওয়ামীলীগের বিপক্ষে গেলে তারা বলে- আমি বিএনপি। হুমকি ধামকি, মামলা-হামলার ভয় দেখানো। আবার এই একই আমার কথা বিএনপির বিপক্ষে গেলে তারা বা তাদের অনুসারীরা বলে- আমি আওয়ামীলীগ। বলেই সেই একইভাবে হুমকি ধামকি, মামলা হামলার ভয় দেখানো। আজব দেশের আজব রাজনীতি, অন্ধ রাজনীতি। একেবারে অন্ধ। অর্থাৎ যে যেই দলের রাজনীতি করবে, সেই দল জনগণের ক্ষতির কারণ হলেও তাদের হ্যা-তে হ্যা-ই মিলাতে হবে, নইলে বেচারা জনগণের রক্ষা নেই! সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা বলতে এদেশে কখনও কিছু ছিল না, এখনও নেই। নির্যাতক বা প্রেক্ষাপট বদলেছে শুধু, জনগণের উপর সেই একই কায়দায় নির্যাতন বদলায়নি। আগে সরকার দলের বিপক্ষে কিছু বললে হুমকি ধামকি হামলা মামলার ভয় থাকতো। এখন সরকারে নেই, কিন্তু দখল বাণিজ্যে এগিয়ে থাকা বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের হুমকি ধামকি হামলা মামলার ভয়। সাধারণ জনগণ বড্ড কোনঠাসা হয়ে আছে। অথচ জনাব ড. ইউনূস সাহেব এসবে নজর দিচ্ছেন না। যদিও রাস্ট্র এবং রাস্ট্রের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্বই থাকে প্রধানের। সে যাই হোক্, যা বলছিলাম- আল্লাহ বাঁচাইছে যে আমাকে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি কিংবা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের সেসব অন্ধ এবং দিন কানাদের মত রাজনীতির নামে নিজের মাথা বেঁচে খেতে হয়না। আমি সকল সরকারের আমলেই মাথা উঁচু করে কথা বলি। কারণ, আমি চোখ বন্ধ করে নির্দিষ্ট কারও পা চাটি না। যে ভাল কাজ করে, তার সেই কাজকে ভাল বলি; আবার যে যখন খারাপ কাজ করে, সেটাকে খারাপ বলি অকপটে। আমার মত হতে হলে পূণরায় এদেশে জন্ম নিয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে গণমানুষের কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যেতে হবে। নাহয় আমাকে পরিমাপ করা কোনো ছাপোষা রাজনৈতিক কর্মীদের পক্ষে সম্ভব না, যাদের নিজেদের মাথায় ঘিলু নাই। যারা অন্যের ঘিলুতে অন্ধের মত দৌড়োয়। ২দিন আগে জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ে আমার একটি লেখা রীতিমতো ভাইরাল হয়। সেটিকে কেন্দ্র করে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে ফেসবুকের কমেন্ট ও ম্যাসেজবক্সে যেসব হুমকি ধামকি দেখছি, তাতে করে নিশ্চিতভাবে একটা কথা বলতে পারি- ‘পিপীলিকার পাখা উড়ে মরিবার তরে’। যারা ক্ষমতায় না গিয়েই এত বেশি লাফাচ্ছে, যাকে তাকে হুমকি ধামকি, হামলা মামলায় জড়াচ্ছে; বাই চান্স নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় না এলে কি হবে তাদের? দলটির সেসব ছা-পোষা কর্মী-সমর্থকদের হুমকি ধামকিতে ভরা কমেন্ট বা ম্যাসেজ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি বরং হাসির রিএ্যাক্টে দু’ চারটে রিপ্লে দিয়ে নিজে নিজে হাসতে থাকি। কিন্তু কষ্ট হয়, কান্না আসে যখন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা আমার লেখার সাথে সহমত পোষণ করে তার ভেতরের কষ্টের কথা আমাকে বলেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে তিনি লজ্জিত! এই দিন দেখার জন্যই কি তারা জীবন বাজি রেখে এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিল? এই প্রশ্নটা যখন তিনি চোখের জলে আমায় করেন, তখন আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। জাতি হিসেবে আমরা এতটাই নিকৃষ্ট হয়ে গেছি যে যাদের রক্তের বিনিময়ে, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন দেশে আমরা জন্ম নিলাম, অথচ রাজনীতির নামে সেই বীর শ্রেষ্ঠদেরই আমরা অপমান, অবমাননা করে যাচ্ছি নানাভাবে। আমরা এখন রাজাকারের পক্ষে কথা বলি, মুক্তিযোদ্ধার সম্মান হরণ করি। আমরা দিন দিন এক রাক্ষুসে জাতিতে পরিনত হয়ে যাচ্ছি। যারা সব খেতে খেতে, অবশেষে নিজেদের আপন জনদেরকেই গিলে গিলে খাওয়া শুরু করেছে। অনলাইনের যুগে আমরা যার পাশে গিয়ে দাঁড়াবার যোগ্যতা রাখিনা, তাকেও দূর থেকে কমেন্ট বক্সে গিয়ে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ করি। এরই নাম বুঝি স্বাধীনতা? যাই হোক্, খুব সাধারণ মগজে একটা ভবিষ্যৎ বাণী বলে যাই- এই মুহূর্তে আচরণে যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল, সহনশীলতা, বিচক্ষণতা, নমনীয়তা বজায় রাখতে না পারলে আগামীতে জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে না দীর্ঘদিনের অভুক্ত বিএনপি নামের দলটি। বিশেষ করে নিজেদের কর্মী সমর্থকদের মারমুখী বিরুপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জনগণের আস্থা তথা ভোট হারাবে বিএনপি। সুতরাং সাধু সাবধান, পিপীলিকার পাখা উড়ে মরিবার তরে….।

Leave a Reply

Your email address will not be published.