রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর

আশরাফুল আবেদীন, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। দলটি ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবে রূপ দিয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে আনা ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হয়েছ।

বৃহস্পতিবার ০৫ অক্টোবর দুপুর ৩ টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই হস্তান্তর কার্য সম্পন্ন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ, গড়লো নতুন ইতিহাস। এখন বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশ বাংলাদেশ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশনের (রোসাটম) মহা-পরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোস।

এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে এসে পৌঁছায়। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়কপথে ঢাকা থেকে রূপপুরে আনা হয় চালানটি। ইউরেনিয়াম পরিবহনে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

রূপপুর প্রকল্পের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাশিয়া থেকে দেশে পৌঁছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান। রোসাটমের জ্বালানি প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেভেলের একটি প্রতিষ্ঠান নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেটস প্ল্যান্ট (এনসিসিপি) রূপপুরের এই জ্বালানি উৎপাদন করছে।

১৯৬১ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গতি পায় ২০০৮ সালের পরে। তখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর প্রকল্পের পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে।

প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, নির্ধারিত সময়ে চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে। এর ফলে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.