এগিয়ে চলেছে ডা. হুমায়ুন রেজার এতিমখানা ও মাদ্রাসা

এস এম আনোয়ার হোসেন অপু, বিশেষ রিপোর্টার, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জঃ মেঘনা বিধৌত রূপসী বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার বিশনন্দী-কড়ইতলার নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত “হাসান ইসহাক শোয়েব রুহানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা।” নজরকাড়া সুন্দর এর চারপাশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। দিগন্ত বিস্তৃত অখন্ড বিশাল সবুজ শস্য ক্ষেত্রের মাঝে মুক্তার দানার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মাদ্রাসাটি। ভিতরে দৃষ্টিনন্দন ফুল-ফল বাগানে শত শিশুর পদচারনা। একপাশে চকচকে টাইলসের বিশাল দোতলা দৃষ্টি নন্দন ওয়াক্ত মসজিদ।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ডা. হুমায়ুন রেজা (অর্থপেডিক স্পেশালিষ্ট) ও ডা. রিনি রেজা (গাইনোকোলজিস্ট) দম্পতির একমাত্র পুত্র হাসান মোহাম্মদ সাঈদ। মেধাবী ছাত্র সাঈদ কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে সমাপনী বর্ষে অধ্যয়নের সময় বন্ধুদের নিয়ে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালে আনন্দ ভ্রমনে যায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে। সেখানে স্নানের সময় চোরাবালিতে আটকে যায় হাসান। তাকে উদ্ধার করতে হাত বাড়ায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সতীর্থ ইসহাক। ইসহাকের সব প্রচেষ্টা বিফল হয় এবং দু’জনেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তাদের অকাল মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয় এই ডাক্তার দম্পতির বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন সহ সকল সুধীমহল। তারও আগে ২০১৩ সালে তাঁদের ঘনিষ্ঠ আত্নীয় সোয়েবও একই স্থানে একইভাবে করুণভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তাঁদের তিনজনের আত্মার মাগফিরাত ও এলাকার শিশুদের দ্বীনি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এই মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি তাঁদের নামে নামকরণ করা হয়। সেই ২০১৮ সালে শুরু হওয়া হাঁটি হাঁটি পা পা করে মাদ্রাসাটি আজ বেশ ভালো পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ডাক্তার পরিবারের নিরলস প্রচেষ্টায়। শত সন্তানসম ছাত্রদের মুখে তিনি নিজ সন্তান হাসানের মুখ দেখে তৃপ্ত হন। তিনি যখন মাদ্রাসাতে প্রবেশ করেন তখন ছোট্ট শিশুগুলো দৌড়ে তাঁকে ঘিরে ধরে বলতে থাকে দাদু আসছে! দাদু আসছে!

ড. হুমায়ুন রেজার সাথে বেড়াতে এসে কবি এ কে সরকার শাওন মাদরাসা ক্যাম্পাস দেখে আনন্দে অভিভূত হন। তিনি বলেন, “এটাকে তো ফুলের বাগানের রিসোর্ট বলে মনে হয়।”

সকাল প্রাতঃভ্রমন শেষে কয়েকজন শিশু ছাত্রকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সময় ডা. হুমায়ূন রেজা বলেন,” এরাই আমার ঘর, সংসার সব। এরা সবাই আমাকে দাদু বলে ডাকে। এদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই।”

মাদরাসাটির তরুণ প্রিনসিপ্যাল মুফতি নুরুজ্জামান বলেন,”আল্লাহপাকের ইচ্ছায়, ডাক্তার স্যারের গাইডেন্সে এবং সবার দোয়ায় এই মাদরাসাটিকে নারায়নগঞ্জের মধ্যে সেরা মাদরাসা হিসাবে দেখতে চাই ইনশাআল্লাহ”।

ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানটি আরও সম্প্রসারিত হবে বলে জানিয়েছেন ডা. রেজার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী যিনি প্রতিষ্ঠানটিকে পরমযত্নে দেখাশোনা করছেন সারাক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.